শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

গরমে সুস্থ থাকবেন যেভাবে

বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২

প্রিন্ট করুন

চলমান ডেস্ক: দেশের প্রকৃতিতে এখন বসন্তের প্রায় শেষ। গ্রীষ্ম ধীরে ধীরে উঁকি দিচ্ছে। আর গরমের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সূর্যের প্রখর তাপে পরিবেশ এখন বদলাতে শুরু করেছে। আর প্রকৃতিতে এই পালাবদলের সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে নানান রকম রোগ, বালাই ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে মানুষদের। গরমের সময় কমন কিছু রোগের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায়ও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ঘামাচি, পানিস্বল্পতা ছাড়াও জ্বর, অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে চামড়া পুড়ে যাওয়া, ফুড পয়জনিং বা বদহজমের কারণে বমি বা ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যাও বাড়ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমের সময়কার কিছু সাধারণ সমস্যা সম্পর্কে…

পানিস্বল্পতা:

গরমের সময় পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বেশি হয়। এ সময় ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। এতে রক্তচাপ কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পানিশূন্যতার জন্য মাথাব্যথা বা মাথা ঝিমঝিম করে। এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। তীব্র পানিস্বল্পতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা কিংবা কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

তাই এ সময়ে মাঝে মধ্যে পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি ডাব, তরমুজ বা পানিজাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়া উচিত। এতে পানিশূন্যতা রোধসহ শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।

অ্যালার্জি:

গরমের সময় ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়ে ঘর্মগ্রন্থি ও নালি ফেটে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। ঘামাচি হয়। আবার ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে ইনফেকশনও হতে পারে। অনেকের ঘামে প্রচুর গন্ধও হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ঘাম ও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এ সময় বেশি হয়।

যারা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ থাকে, তাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় ও ফোসকা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই এর জন্য দায়ী। যারা একটু ফর্সা বা যাদের ত্বক অতিসংবেদনশীল বা সেনসিটিভ তাদের এ সমস্যা বেশি হয়।

ফুড পয়জনিং:

খাবার খেয়ে বারবার বমি করা, পাতলা পায়খানা হওয়া, জ্বর, পেটব্যথা ইত্যাদি বেশি হলে ধরে নেয়া যায় ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। গরমের সময় ফুড পয়জনিং বেশি হয়। এ সময় খাবার দ্রুত পচে যায় বলে এতে জীবাণু সহজে সংক্রমিত হয়। এ জন্য বাসি বা পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত খাবার, গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খাওয়া উচিত নয়।

পাশাপাশি হাত-মুখ, থালা-বাটি ভালোভাবে ধুয়ে, পথেঘাটে তৈরি খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেলে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা কমে। কারও ফুড পয়জনিং হলে সময়মতো এর চিকিৎসা করা না হলে তীব্র পানিস্বল্পতা, এমনকি রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি হয়েও জটিলতা বাড়তে পারে।
এ ধরনের সমস্যা হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। রোগী মুখে না খেতে পারলে এবং জটিল পরিস্থিতি মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

হিটস্ট্রোক:

হিটস্ট্রোক মানে হচ্ছে যখন শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বেড়ে যায়। কখনও কখনও এই তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার কাছাকাছিও যেতে পারে। এটা একটা জটিল পরিস্থিতি, যা হঠাৎ ঘটে। সাধারণত চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধরা, যাদের গরমে সহ্যক্ষমতা কম, কিডনি, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিসের রোগী, যথেষ্ট পানি পান করেন না বা যারা ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ এবং প্রচণ্ড রোদে কাজ করেন এমন লোকেরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

হিটস্ট্রোকে দেহে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হতে পারে), এ সময় তেমন ঘাম হয় না এবং ত্বকের বর্ণ লালচে হয়, নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, মাংসপেশির খিঁচুনি হয়, হাত-পা কাঁপে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত বা ক্ষীণ হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়, বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করে, পেশি দুর্বল হয়ে আসে, অনেক সময় রোগী পুরো নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি কোমা বা শকে চলে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোককে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। দ্রুত ও সঠিকভাবে হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে। কেউ যাতে এতে আক্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন- আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ঠাণ্ডা বা বরফ মিশ্রিত পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। বিশেষ করে রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড়সহ নানা স্থান মুছে দিন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিন, পা একটু উঁচু করে দিন। মাথা একটু নিচের দিকে থাকা ভালো।

অন্যান্য সমস্যা:

গরমের সরাসরি প্রভাব ছাড়াও অন্য কিছু সমস্যা হতে পারে। গরমে পানির তীব্র অভাব থাকায় পানিদূষণ বেশি হয়। মানুষ বাধ্য হয়েও দূষিত পানি গ্রহণ করে। অনেক সময় অজান্তেই জীবাণুযুক্ত পানীয় পান করে। এ কারণে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ‘ই’ ইত্যাদি বেশি হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য পীড়ায়ও অনেকে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ থেকে বাঁচতে যেখানে-সেখানে শরবত, পানি ইত্যাদি পান করবেন না। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে তৈরি শরবত মোটেই পান করবেন না। বরং বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

এসব সমস্যা মোকাবেলায় যা করণীয়:

গরমে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মোকাবেলায় আমাদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের অভ্যন্তরকে পরিশোধিত করে। শরীরে ঘাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে পানিতে খানিকটা লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে খাবার স্যালাইন পান করলে ভালো হয়।

ঠাণ্ডা লেবুর শরবত কিংবা তরমুজ জাতীয় রসালো ফলও এ সময় খাওয়া যেতে পারে।প্রচণ্ড গরমে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে। এই পরিস্থিতিতে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিলে আরাম লাগবে। পারলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম নিতে হবে, পান করে নিতে হবে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি।এনার্জি ড্রিংকস কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয় যা শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অন্য পানীয় পানে বিশেষ কোনো উপকার নেই। বিশেষ করে অ্যালকোহলযুক্ত বেভারেজ পান করলে শরীরে আরো বেশি পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়। তাই পানি স্বল্পতারোধ করতে গিয়ে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করলে শরীর আরো বেশি পানি হারাবে।

পরিচ্ছন্নতার জন্য গরমকালে দুবার গোসল করে নেয়া ভালো। দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বারবার সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে গোসলে বিশেষ ধরনের সাবান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সোপ ব্যবহারে উপকার আছে।

গরমের সময় সালাদ একটি উপাদেয় খাবার। দই, শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে সালাদ করা যায়। অনেক সময় এর সঙ্গে পাকা পেয়ারা ও আপেল দিয়েও সালাদ করা যায়। সালাদ তৈরি করে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে পরে খাওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে টকদই বা কাগজি লেবুও দেওয়া যেতে পারে। লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা দেহকে ঠান্ডা রাখে এবং ত্বক মৃসণ রাখে।

তিরিক্ত গরমে অনেক সময় হজমে সমস্যা হয়। তাই সাধারণ খাবার, যেমন-ভাত, মাছ, ডাল, ভর্তা ইত্যাদি খাওয়াই ভালো।সূর্যের দাবদাহ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখা যেতে পারে। সানস্ক্রিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর মাখতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন বা সানব্লকার ক্রিম পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ-১৫ শক্তিসম্পন্ন সানব্লকারই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আইআই/সিএন

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন