ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের মিশর সীমান্তবর্তী এলাকায় লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে একটি অবরুদ্ধ অঞ্চলে নতুন শহর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সমালোচনা করেছে। এই পদক্ষেপকে অনেকেই আধুনিক বন্দিশিবিরের সঙ্গে তুলনা করেছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল আরাবিয়াহ।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন রাফাহ শহরে একটি তথাকথিত মানবিক নগর গড়ে তোলা হবে, যেখানে ধাপে ধাপে প্রায় বিশ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তর করা হবে। এই অঞ্চলে প্রবেশের পর তাদের আর বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
সোমবার সামরিক প্রতিবেদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। গাজায় ইসরাইলের আক্রমণে অনেক অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়ার পর ইসরাইল গাজায় জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তনের যে অমানবিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এই পরিকল্পনা তারই প্রতিফলন।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী প্রথমে ছয় লাখ ফিলিস্তিনিকে এক তথাকথিত মানবিক অঞ্চলের বাইরে সরিয়ে নেবে এবং পরে বাকিদের ধাপে ধাপে সরিয়ে নেবে। এই পরিকল্পনাটি মানবিক উদ্যোগের আড়ালে বাস্তুচ্যুতির একটি প্রক্রিয়া হবে বলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করেছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে চলমান ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় এই মানবিক নগর নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে।
সমালোচকরা বলছেন, এই পরিকল্পনা এবং ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় দেশে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার আহ্বান ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তির মতো। ইসরাইলের মানবাধিকার গোষ্ঠী গিশার নির্বাহী পরিচালক তানিয়া হ্যারি বলেছেন, এটি মানুষকে জোর করে একটি বড় বন্দিশিবিরে ঢোকানোর মত পরিস্থিতি তৈরি করবে, যেখানে ইসরাইলের উদ্দেশ্য স্পষ্ট যে তারা ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দিতে চায়।
ফিলিস্তিনিরা গাজাকে তাদের জাতীয় ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে এবং তাদের উচ্ছেদের যেকোনো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যারা সাময়িকভাবে পালাবে, তারা আর কখনো ফিরে আসতে পারবে না, যা ১৯৪৮ সালের নাকবার সময়কার গণবিচ্ছেদের পুনরাবৃত্তি হবে।
ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন জানালেও ফিলিস্তিনিদের জোর করে উচ্ছেদের ধারণাকেও সমর্থন করেছেন। নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের থাকা বা চলে যাওয়ার বিষয়ে তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্তের সুযোগ থাকা উচিত, যদিও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে ইসরাইল তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার নীতি গ্রহণ করেছে।
এদিকে রাফাহতে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মানবিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ইসরাইলি বাহিনী সহায়তা কেন্দ্রগুলোর কাছে গুলি চালিয়েছে, যা প্রাণঘাতী বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।
গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন সহায়তা কেন্দ্রের কাছে কোনো সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জনসংখ্যা স্থানান্তর পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে।
তবে মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন যে রাফাহতে পরিচালিত মানবিক সহায়তা কার্যক্রম গাজার দক্ষিণে একটি পরিচ্ছন্ন অঞ্চল তৈরি করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে হামাসমুক্ত পরিবেশে ফিলিস্তিনি জনগণকে স্থানান্তর করে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
ইসরাইল সরকার গাজায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে একতরফা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার তাদের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করেছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন