শনিবার, ০৯ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

গাজা গণহত্যা: ইসরাইলের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা বন্ধের ডাক ভারতে

শনিবার, আগস্ট ৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা দেশটির সরকার ও রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে ইসরাইলে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তাদের সতর্কবার্তা, গাজায় যুদ্ধ থেকে বিপুল আর্থিক মুনাফা করছে ভারতের কয়েকটি কোম্পানি।

গত বুধবার সংসদ সদস্যদের পাঠানো এক খোলা চিঠিতে বেঙ্গালুরু ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস (বিএফজেপি) জানায়, বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক অন্তত নয়টি প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র প্রস্তুতকারক— এলবিট সিস্টেমস, ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস—কে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র উপাদান সরবরাহ করছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।

দক্ষিণ ভারতের এই শহরের প্রায় দুই ডজন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বিএফজেপি সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের দাবি অনুযায়ী ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। এর মধ্যে থাকবে রপ্তানি ও ট্রানজিট নিষিদ্ধ করা এবং সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সংক্রান্ত চুক্তি পর্যালোচনা করে স্থগিত করা।

চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্র-সমর্থিত ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ভারতীয় কোম্পানিগুলো কেন ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে— এ প্রশ্ন এখন সংসদ সদস্যদের গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘সম্ভাব্য গণহত্যা’র রায় দেওয়ার পরও ভারতীয় কোম্পানিগুলোর অস্ত্র উপাদান পাঠানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে বিএফজেপি।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনস (সোমো)-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর সাসমস এইচইটি টেকনোলজিস লিমিটেড প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র উপাদান চারটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে।

মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, গাজায় অবরোধের ফলে অনাহারে অন্তত ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শুধু বৃহস্পতিবারই ক্ষুধায় মারা গেছে দুই শিশু। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে কমপক্ষে ১৮ হাজার ৪৩০ শিশু। আহত হয়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। গাজার সমগ্র জনসংখ্যাই এখন দুর্ভিক্ষের মুখে।

জার্মানি ইতোমধ্যেই ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে। ভারতীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, দিল্লিকেও এই পথে হাঁটতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত-ইসরাইল বাণিজ্য ও গবেষণা সম্পর্ক ২০২৩ সালের পর থেকে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যা এখন ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এ উন্নীত।

দেশের ভেতরে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন দমন ও অপরাধীকরণের মধ্যেও কর্মীরা বলছেন, তারা জনসচেতনতা ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, যাতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার জন্য জবাবদিহি করতে হয়।

২০২৪ সালের আগস্টে বিশিষ্ট লেখক ও কর্মী অরুন্ধতী রায়সহ একদল বিশিষ্ট ব্যক্তি ভারত সরকারকে আহ্বান জানান, ইসরাইলে অস্ত্র, ড্রোন ও বিস্ফোরক রপ্তানির অনুমতি অবিলম্বে বন্ধ করা হোক— নইলে এই গণহত্যার সঙ্গে ভারতের নাম চিরদিনের জন্য যুক্ত হয়ে যাবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন