যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, গাজা দখল করা হবে কিনা এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমগ্র ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এমন খবর জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজাবাসীদের ‘খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার’ দিকে মনোনিবেশ করছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। সেটা পুরোপুরি ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনকা বলেছেন, গাজার পূর্ণ দখল ‘ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে’।
তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন এ ব্যাপারে স্পষ্ট। গাজা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাই থাকবে।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, ওয়াশিংটন প্রতি বছর ইসরায়েলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আরও বেড়েছে।
ইসরায়েল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির আদেশ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের গাজার ক্রমশ সংকুচিত এলাকায় ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে অঞ্চলটির ৮৬% এখন সামরিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
তবে অবশিষ্ট অংশে সামরিক অভিযান বাড়লে ফিলিস্তিনিদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে, যারা ইতিমধ্যেই দৈনিক বোমাবর্ষণ ও ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া দুর্ভিক্ষের শিকার। নেতানিয়াহুর গাজা দখলের পরিকল্পনা হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গ্রুপের হাতে থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা বাড়িয়েছে।
এর আগে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করলেও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কারিগরিভাবে এটি দখলই রয়েছে। কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার আকাশসীমা, সমুদ্রসীমা ও প্রবেশপথ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতারা গাজায় পুনরায় সামরিক উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজা থেকে সমস্ত ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দেওয়া, যা ‘এথনিক ক্লিনজিং’ হিসেবে গণ্য হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পও এমন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন।
তবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এই প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানায়। সে সময় ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন গাজার জনগণকে সরিয়ে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ গড়ে তোলার।
মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় প্রায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়েছে, যার ফলে মার্কিন-সমর্থিত গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফোরাম সাইটগুলোই ফিলিস্তিনিদের একমাত্র খাদ্য পাওয়ার স্থানে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ রেখার ভেতরে গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফোরামের নির্ধারিত ত্রাণ বিতরণ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে শত শত ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছে। তবুও জাতিসংঘকে সহায়তা বিতরণের অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র জিএইচএফকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল কিছু খাদ্য ট্রাক ও বিমান থেকে সহায়তা বিতরণের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু তা জনগণের চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
মঙ্গলবার ট্রাম্প পুনরায় দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজাকে ৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। তার প্রশাসন জিএইচএফকে ৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনে ৬১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা একে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন