মুখে মুখে গণহত্যাকে নৃশংস-বর্বর বললেও গোপনে ইসরাইলকে নানাভাবে সাহায্য করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬ মুসলিম দেশ। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে গাজাবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সামরিক সহায়তা দিয়েও তেল আবিবের পাশে থেকেছে দেশগুলো।
সদ্য ফাঁস হওয়া এক মার্কিন নথিপত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, আরব মুলুকের মার্কিন দোসর ওই আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রথম কাতারেই সৌদি আরব। সঙ্গী ছিল বাহরাইন, মিসর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
শনিবার পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়-এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসরাইলের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো নামে গোপন সামরিক জোটে যুক্ত হয়ে কাজ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরব দেশগুলো পর্দার আড়ালে ইসরাইলি সেনা ও মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া, গোপন বৈঠক ও তথ্য আদান-প্রদান চালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই ছয় আরব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের রাডার ও সেন্সর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মোকাবিলার নাম করে তেল আবিবের সঙ্গে কার্যত একীভূত হয় তাদের সেনাবাহিনী।
সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইলি বিমান হামলায় দোহায় নিহত হন একাধিক হামাস নেতা। আরব-ইসরাইলি এই গোপন সহযোগিতা তখন বড় সংকটে পড়ে। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে কাতারের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
ইসরাইলের হামলার দিন থেকেই (৭ অক্টোবর, ২০২৩) গাজার অসহায় মানুষের অধিকার নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আসছেন আরব নেতারা। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের ভূমিকা যুদ্ধ বন্ধে ছিল একেবারেই নীরব দর্শকের মতোই। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের হাতে আসা মার্কিন গোপন নথিতে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে।
নথিতে বলা হয়, ২০২২ সালে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্টকমের নেতৃত্বে এই জোট গঠিত হয়। জোটটির মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের হুমকি মোকাবিলা। তবে বাস্তবে এই জোটের কার্যক্রমের বড় অংশই ছিল গাজা ও হামাসবিরোধী যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই গোপন নেটওয়ার্কে অংশ নেওয়া দেশগুলো একসঙ্গে টানেল যুদ্ধ মোকাবিলা, আকাশ প্রতিরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। আর গাজায় বোমাবর্ষণে এই কৌশল ব্যবহার করেছে ইসরাইল।
বিশ্লেষকদের মতে, আরব বিশ্বের নেতারা প্রকাশ্যে যা বলছেন, কৌশলগত কারণে গোপনে তার উলটো কাজ করছে। কারণ তাদের কাছে ইরানের আঞ্চলিক হুমকি ফিলিস্তিন সমস্যার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি আরবদের এই দ্বৈত অবস্থানের কারণেই গাজাবাসীর সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন