শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

শিরোনাম

চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা: পাঁচ ভাইয়ের পর মৃত্যু আরো এক ভাইয়ের

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২২

প্রিন্ট করুন

চকরিয়া, কক্সবাজার: কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে সড়ক দুর্ঘটনার ১৪ দিন পর আহত রক্তিম শীলও মারা গেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটার দিকে তিনি মারা যান বলে জানান রক্তিমের বোন জামাই খগেশ চন্দ্র খোকন।

সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন চেষ্টার পরও তাকে জীবিত ফেরানো যায়নি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি আহত হয়েছিলেন।

চমেকের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার হারুনুর রশিদ গণ মাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল দশটার দিকে রক্তিম শীলের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’  

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় রক্তিম সুশীলের ভাই অনুপম শীল, নিরুপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীল নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় আহত রক্তিমকে ওই দিনই চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহতের শ্যালক অনুপম শর্মা বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দিন ৮ ফেব্রুয়ারি চমেকে দুলাভাইয়ের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেখানে না পেয়ে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে খরচ অনেক বেশি। ব্যয় বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ম্যাক্সে এক দিন রেখে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। জেনারেল হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা চলে। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ফের তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চমেকের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলেছে। এত চেষ্টার পরও তার জ্ঞান ফেরানো যায়নি। আমার বোন ও ভাগ্নেসহ পুরো পরিবার এখন অনিশ্চয়তায় পড়ল।’

প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্রের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ভাই অনুপম শীল (৪৬), নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০) ও স্মরণ শীল (২৯) নিহত হন। ঘটনার দশ দিন আগে তাদের বাবা সুরেশের মৃত্যু হয়। বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। স্থানীয় একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে এক সাথে নয় ভাই-বোন (সাত ভাই ও দুেই বোন) হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই এক সাথি চার জনের মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকেলে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই স্মরণ শীল।

এ ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান সুরেশ চন্দ্র শীলের মেয়ে মুন্নী শীল। আহত হন আরো দুই ছেলে ও এক মেয়ে। নিহতদের বোন হীরা শীল মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।

এ দিকে, পাঁচ ভাইকে চাপা দেয়া পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক করেছে র‍্যাব।

তাকে আটকের পর র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন রাস্তায় অতিরিক্ত কুয়াশা থাকা সত্বেও চালক দ্রুত কক্সবাজার পৌঁছে সবজি ডেলিভারি দিতে বেপরোয়াভাবে পিকআপটি চালাচ্ছিলেন। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের উত্তরে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারতদের দূর থেকে খেয়াল করেননি তিনি। গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে থাকায় কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এতে এ হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে। এ একটি দুর্ঘটনা সুরেশ চন্দ্রের পরিবার তছনছ হয়ে গেল।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন