চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক ফাঁকি রোধ, স্ক্যানার সংকট নিরসন ও কাস্টমস ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভা করেছেন। বুধবার (২ অক্টোবার) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করেন।
শুল্ক ফাঁকি রোধে অটোমেশন ও প্রযুক্তির ব্যবহার
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, “শুল্ক ফাঁকি রোধে জালিয়াত চক্র চিহ্নিত করতে এনবিআর ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড’ সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের ওপর জোর দিচ্ছে। এটি কার্যকর হলে শুল্ক ফাঁকি এবং জালিয়াতি চিহ্নিত করা সহজ হবে। আমরা এমন একটি সিস্টেম চালু করছি যেখানে ব্যবসায়ীরা কোন হয়রানি ছাড়াই দ্রুত সেবা পাবে। এছাড়াও কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সার্ভারের সংকট রয়েছে, যা নিরসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআর কাস্টমসের আধুনিকায়নের জন্য কাজ করছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানার সংকট ও কনটেইনার জট নিরসনের উদ্যোগ
বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান বন্দরের স্ক্যানার সংকট নিরসনে নতুন স্ক্যানার দ্রুত স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে চাই এবং চিঠিপত্র চালাচালির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করতে চাই।”
তিনি বন্দরে পড়ে থাকা কনটেইনারগুলোর দ্রুত নিলাম কার্যকর করার ওপরও জোর দেন। বিশেষত, বিস্ফোরক পণ্যগুলো বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে, যা ধ্বংস করা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি ও এনবিআরের প্রতিশ্রুতি
একইদিন বিকেলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সম্মেলন কক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন এবং বিজিএমইএর নেতাদের সাথে এনবিআর চেয়ারম্যানের পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিএন্ডএফ এজেন্টরা এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ১৪ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, যার মধ্যে ছিল কাস্টমস কার্যক্রমের আরও দ্রুততা ও হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণ।
বিজিএমইএর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতারা আমদানি-রপ্তানিতে কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান। তারা পোশাক শিল্পের জন্য দ্রুত ও সহজ সেবা প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমরা ঝামেলামুক্ত সেবা প্রত্যাশা করি যাতে রপ্তানির সময়মতো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বিজিএমইএর এই দাবির প্রেক্ষিতে আশ্বাস দেন যে, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই ব্যবসায়ীরা যেন সহজে এবং দ্রুত কাস্টমস সেবা পায়। এতে করে রপ্তানি কার্যক্রমে কোন বাধা সৃষ্টি না হয়।”
রাজস্ব আহরণে প্রভাব নিয়ে আশ্বাস
এছাড়াও, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমসের কার্যক্রমে সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও শেষ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণে তেমন প্রভাব পড়বে না। এ ঘাটতি পূরণে এনবিআর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ব্যবসায়ীরা যদি যথাসময়ে শুল্ক পরিশোধ করেন, তবে রাজস্ব ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।”
এই বৈঠকগুলোর মাধ্যমে এনবিআর, কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিজিএমইএর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে শুল্ক ব্যবস্থার উন্নয়নের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে।
Views: 3
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন