সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

চট্টগ্রামে ১৪ গ্রেডের কর্মচারীর অঢেল সম্পদ, দুদকে অভিযোগ

শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে পদে বহাল থাকা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে দুদক বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন আট আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে আঁকড়ে ধরে রাখা ত নাজির পদ থেকে তাকে অপসারণের জোর দাবি জানান।

একইসাথে অভিযুক্ত উজিরের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ, বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বিভাগীয় কার্যধারা শুরুর জন্য আবেদন করা হয়েছে অভিযোগের চিঠিতে।

অভিযোগপত্র দেওয়া আট আইনজীবী হলেন সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট এম শফিকুল আলম, আজিম‌উদ্দিন পাটোয়ারী, ইয়াছিন আলফাজ, মহি উদ্দীন, নাদিম মাহমুদ, সৈয়দ ওয়াহিদ, সাইফুল্লাহ খালেদ ও শামীম পাটোয়ারী।

অভিযোগপত্রে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, মুজিব শতবর্ষে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিজের দাপট তৈরি করেন নাজির জামাল উদ্দিন। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চটকদার কথাবার্তা বলে আস্থা অর্জন করেন একটি পক্ষের। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের সুপারিশে জেলা প্রশাসনের নাজির পদে আসীন হওয়া এই জামাল দাপট ব্যবহার করে নামে-বেনামে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ।

এতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রায় সব কর্মকর্তা চাকরির তিন বছরের আগেই বদলি হয়েছেন। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বলে ৫ বছর ধরে বহাল তবিয়তে আছেন জামাল উদ্দিন। এছাড়া অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের আশেপাশেও তাকে দেখা গেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জুলাই যোদ্ধারাও।

নানান সময়ে দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অভিযোগ জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। এতে বলা হয়, বিগত ৫ বছরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে চালানো প্রচার-প্রচারণা ঢেকে ফেলতে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছিলেন জামাল উদ্দিন। এছাড়া ৫ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অফিসেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।

অভিযোগপত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বলা হয়, বর্তমানে তিনি ১৪তম গ্রেডের কর্মচারী, যার বেতন সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভবিষ্যৎ তহবিলের জন্য জমা রাখতে হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা। চলমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে ২৪ হাজার ৮০০ টাকায় যখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সএখানে স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ তিনি থাকেন নগরীর কোর্ট রোডের দেড় কোটি টাকা দামের একটি আলিশান ফ্ল্যাটে।

এছাড়া সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বশর মো. ফখরুজ্জামান ও মোমিনুর রহমানের প্রভাব খাটিয়ে জামাল উদ্দিন বিগত ৪-৫ বছরে অন্তত ৪০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে এতে। এর আগেও তার অবৈধ সম্পদের তথ্য চেয়ে নগরীর ছয়টি ভূমি অফিসে চিঠি পাঠায় দুদক।

বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এতে বলা হয়, দুদক আইন, ২০০৪ এর বিধি অনুযায়ী অভিযোগসমূহ আমলে নিয়ে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান শুরু, দুর্নীতিবাজ নাজির জামাল উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ, অভিযুক্ত যাতে বিদেশে পালাতে না পারে, সেজন্য আদালতে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করার জন্য অনুরোধ করছি।

অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী
এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি, জ্যেষ্ঠতা এবং পদোন্নতির বিধান উপেক্ষা করার মাধ্যমে চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে অনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন ‘নাজির’ পদে বহাল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ সমূহ আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে উচ্চ-পদস্থ কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান শুরু, দুর্নীতিবাজ নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ এবং অভিযুক্ত যাতে বিদেশে পলায়ন করিতে না পারে, সে জন্য বিজ্ঞ আদালতে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং একই সাথে অভিযুক্ত কর্মচারীর অভিযোগ সমূহকে বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করার জন্য আবেদন পত্র জমা দিয়েছি।

আমি এম. শফিকুল ইসলামসহ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাতজন আইনজীবীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিয়েছি। আশা করছি, দুদক কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাসময়ের মধ্যে তদন্তপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন