★ কারিগরি সহায়তা দেবে চীন
★ সমঝোতা চুক্তি সই
★ সমুদ্র গবেষণায় যোগ হবে নতুন মাত্রা
★ শিগগিরই কাজ শুরু
সিএন প্রতিবেদন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নির্মিত হতে যাচ্ছে ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। এতে কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে চীনের জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের সমুদ্র গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফির (এসআইও)’ সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) একটি চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার ও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ডাইরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ড. ফ্যাং ইংজিয়া চুক্তিতে সই করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং গ্রাউন্ড ষ্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তারা দুইদিন সরেজমিনে ঘুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
সূত্রে আরও জানা যায়, স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনটি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের পাশে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি, লোকবল, গবেষক প্রদান করবে। পাশাপাশি স্টেশনটি ব্যবস্থাপনা করবে। অন্যদিকে চীনের প্রতিষ্ঠানটি কারগরি ও যন্ত্রপাতি সহায়তা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং গ্রাউন্ড ষ্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের চবির ফোকাল পারসন ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, ২০১৯ সালে ওশান কালার রিমোট সেন্সিং এর একটা ট্রেনিং নিতে চীনের এই প্রতিষ্ঠানে এসে তাদের সাথে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক একটি যৌথ চুক্তির প্রস্তাব দিই। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তাদের সাথে চবি ওশানগ্রাফি বিভাগের একটি গবেষণা সহযোগিতা চুক্তি হয়। এরপর আরও কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ উপাচার্যের নেতৃত্বে আমরা এসআইও-র আমন্ত্রণে উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়েছিলাম এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধি দল চলতি বছরের জুলাইতে ক্যাম্পাসে আসেন। তারা সরেজমিনে জায়গা দেখে একটি মেরিন স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেন । উপরোক্ত চুক্তি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত রোড ম্যাপ তৈরি করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানান। এরপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ (প্রশাসন) আমরা গত ১৬ ডিসেম্বর চায়না ফ্লাই করে ১৭ থেকে ১৯ তারিখ উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন, বেইজ স্টেশনসহ প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রম ও সক্ষমতা ঘুরে দেখে চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন চবির পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
তিনি আরও বলেন, স্যাটলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশনটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের সমুদ্র গবেষণায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। আমরা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে যেসব আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট যাবে সেগুলো থেকে বিস্তারিত তথ্য ও ডাটা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবো । বিশেষ করে সমুদ্রে মাছের বিচরণ, পানির উচ্চতা, সমুদ্রের পানির গতি প্রকৃতিসহ আবহাওয়া জলবায়ু বিষয়ক নানাবিধ বিষয় সহজেই জানতে পারব। এতে করে সমুদ্র গবেষণায় ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, পর্যাপ্ত কারিগরি ও তথ্য সহায়তার অভাবে আমরা গভীর সমুদ্র নিয়ে তেমন কাজ করতে পারি না। এই স্যাটেলাইট স্টেশনটি নির্মিত হলে আমরা বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য ও ডাটা পাবো। গভীর সমুদ্র নিয়ে ভালো ভালো গবেষণা হবে। এতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার জানান, স্টেশনটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের জন্য বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র, আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণার সুযোগ ও সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া এতদঞ্চলের আবহাওয়া ফোরকাস্টিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং অনন্বেষিত সমুদ্র সম্পদের তথ্য সংগ্রহ ও টেকসই সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন