শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

চবির অস্ত্রধারী প্রহরীদের দায়িত্ব-ভাতা নিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তার ‘অপপ্রচার’

সোমবার, মার্চ ২৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অস্ত্রধারী প্রহরীদের দায়িত্ব-ভাতা নিয়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। একই বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্য সম্বলিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেছে কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত “চবির অস্ত্রধারী প্রহরীদের দায়িত্ব-ভাতা আত্মসাৎ” সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক এবং আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস মাত্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার সকল ইউনিট/উপ-ইউনিটে সকল কোটার সাক্ষাৎকারের দিনসমূহে নিয়োজিত অস্ত্রধারী প্রহরীদের সম্মানী’র অর্থ পরিশোধের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এ প্রতিবেদক এর সাথে আমার কোন আলাপ হয়নি।

বর্ণিত বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা নিম্নরূপঃ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার সকল ইউনিট/উপ-ইউনিটে সকল কোটার সাক্ষাৎকার ২০২৩ সালের ১৮, ১৯, ২০ ও ২২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এ সাক্ষাৎকার পরিচালনায় নিরাপত্তা দপ্তরের অস্ত্রধারী প্রহরীসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, কতিপয় সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিয়োজিত ছিলেন। ‘২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র সিদ্ধান্তানুযায়ী কোটার সাক্ষাৎকারের দিনসমূহকে প্রতিদিন ২ শিফট করে সর্বমোট ৮ শিফ্ট হিসাব করা হয়। এ প্রেক্ষিতে নিয়োজিত সকলেই সর্বোচ্চ ৮ শিফটের ডিউটির সমপরিমান (কাজের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে) সম্মানী পেয়েছেন।

অস্ত্রধারী প্রহরীগণের ১৫ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত (৮ দিন) ২ জন করে প্রতিদিন ৩ শিফট করে সর্বমোট ৪৬ টি ডিউটি দাবি করে ১৩ আগস্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তা একটি পত্র দেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তার পত্রটি ‘২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র সভায় এজেন্ডাভুক্ত করা হয়। পরে ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র ১২তম সভার ৮ নং বিষয়ে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে কোটায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার দিনসমূহে একাডেমিক শাখায় অস্ত্রধারী প্রহরী নিযুক্ত করার নিমিত্ত ১৩১০/- টাকা হারে ১৬টি ডিউটি বাবদ অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া ঐ সভায় সাক্ষাৎকার দিনসমূহ ব্যতীত অন্যান্য শিফটে নিয়োজিত থাকার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরীদেরকে নিয়মানুযায়ী অধিকাল ভাতা পরিশোধের জন্য উপস্থিত হিসাব নিয়ামক-কে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়। নিয়মানুযায়ী অধিকাল ভাতার বিল দাখিল করলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে হিসাব নিয়ামক সভাকে অবহিত করেন।

ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ৪৬টি ডিউটির সমপরিমান অর্থ পরিশোধের জন্য একটি বিল ও নোট প্রেরণ করেন; যা নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যে প্রমাণিত।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত নোটে হিসাব নিয়ামক দপ্তর ও একাডেমিক শাখার মতামতসহ বিলটি নিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. সাহেদুল ইসলামসহ কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী (যাদের নাম আমার জানা নেই) এবং চবি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার অফিসে এ বিল পরিশোধের ব্যাপারে তিন/চার বার আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিবারই আমি তাদেরকে সবিনয়ে ‘ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র সিদ্ধান্ত অবহিত করে ১৬টির ডিউটির সমপরিমান অর্থের অধিক অর্থ পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করি।

বিভিন্ন সময়ে ৪৬ টি ডিউটির সমপরিমান অর্থ পরিশোধের জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন এবং বিল কিভাবে নিতে হয় সেটা নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রাজ্জাক জানেন বলে আমাকে শাসান। এর কিছুদিন পর উপর্যুক্ত লোকবল নিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমার অফিসে আসেন এবং নিয়মবর্হিভূতভাবে পূর্বে গৃহীত ভর্তি পরীক্ষার ডিউটির বিলের ন্যায় ৪৬ টি ডিউটির সমপরিমান অর্থ পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন এবং আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচারণ করে আমার সামনে ও আমার কয়েকজন সহকর্মীর উপস্থিতিতে নোটসহ বিলটি ছিঁড়ে ফেলেন; যা অফিস শৃঙ্খলার পরিপন্থী। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিক অফিসার সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে রেজিস্ট্রারকো অবহিত করি। ঐদিন প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদারের উপস্থিতিতে ও মধ্যস্থতায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক আমার অফিসে এসে তার কৃতকর্মের জন্য আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে আমি অফিসিয়ালি আর কোন কার্যক্রম গ্রহণ করিনি।

উল্লেখ্য, নিরাপত্তা প্রহরীগণ ‘১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি’র সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে তৎকালীন প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিদের যোগসাজশে ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় ডিউটি করার জন্য অনুমোদিত সর্বোচ্চ ১৩/১৪টি ডিউটির স্থলে ৩০ থেকে ৩৫টি ডিউটির অর্থ বা তদুর্ধ অর্থ হাতিয়ে নেন।

উল্লেখ্য, সাক্ষাৎকারের দিনসমূহে নিয়োজিত থাকার জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা জনাব শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক নিয়ামানুযায়ী তার ডিউটির সম্মানী নগদে গ্রহণ করেন; তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক বিলটি ছিড়ে ফেলার পর নিয়ামুনাযায়ী নিরাপত্তা প্রহরীদের ১৬টির বিল দাখিল করে তা গ্রহণ করার জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা জনাব শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাককে বারবার মৌখিকভাবে তাগাদা দেয়া হলেও নিরাপত্তা দপ্তর কর্তৃক এরপরে আর কোন বিল দাখিল করা হয়নি। ফলে নিয়ামুনাযায়ী নিরাপত্তা প্রহরীদের ১৬টির বিল অদ্যাবধি পরিশোধ করা হয়নি।

সাক্ষাৎকারে নিয়োজিত অস্ত্রধারী প্রহরীদের অপরিশোধিত অর্থসহ অব্যয়িত সর্বমোট ৪,২৪,৬৮০/- (চার লক্ষ চব্বিশ হাজার ছয়শত আশি) টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে (ইউনিট তহবিলের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব নম্বর) জমা/ফেরত প্রদানপূর্বক ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার কোটার সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত সামগ্রিক অগ্রিম বিল গত ১৮ অক্টোবর সমন্বয় করা হয়।

এমতাবস্থায়, কোটার সাক্ষাৎকারে নিয়োজিত অস্ত্রধারী প্রহরীদের ডিউটির অর্থ আমি আত্মসাত করি নাই এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক) কর্তৃক আত্মসাত করার কোন সুযোগ নেই।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, প্রতিবেদক সংবাদে ভাতা ‘আত্মসাৎ’ মর্মে মুখরোচক ও মনগড়া যে প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন তা নিতান্তই আপত্তিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যাবলী ও অর্থ বন্টন যথাযথ কমিটির অনুমোদনক্রমে পরিচালিত হয়। প্রতিবেদক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না নিয়ে এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে খাটো করেছেন; যা অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত দুঃখজনক।

অতএব, জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রতিবাদটি দ্রুত আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন