সিএন প্রতিবেদন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কলা ভবনের শেষ সীমানা ধরে কিছুদূর হেঁটে গেলে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম এক পাহাড়ি ঝরণা। এই ঝরণার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ ও পানিতে গোসল করতে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। তবে পানিতে নেমে গত ৮ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বাকি তিনজন কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহর থেকে ঝরণা দেখতে এসে পানিতে নেমে মারা গেছেন জুনায়েদ নামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র।
জানা যায়, দুপুর পৌঁনে ১ টার দিকে ঝরণা দেখতে আসেন মহসিন স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র। এসময় তারা পানিতে গোসল করতে নামলে জুনায়েদ পানিতে তলিয়ে যান। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট তাকে মৃত উদ্ধার করে।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে শহর থেকে ঝরণা দেখতে এসে গোসল করতে পানিতে নেমে মারা গেছেন জিসান নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।
এর আগে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই পা পিছলে এই ঝরণায় পড়ে নিখোঁজ হয় সাইফুল ইসলাম মুন্না নামের এক কলেজ ছাত্র। পরবর্তীতে ২ ঘন্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তাকেও মৃত উদ্ধার করে হাটহাজারী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল।
এর আগে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে একই ঝরণায় পড়ে মারা যায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী পাভেল ও রিফাত।
সাইনবোর্ড টানিয়ে দায় সারছে কর্তৃপক্ষ:
এ দিকে ঝরণা দেখতে গিয়ে বারবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর সাইনবোর্ড টানিয়ে ঝরণা এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকায় তারকাটা বেড়া দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি সাইনবোর্ডের পাশে একজন নিরাপত্তা প্রহরীও দেওয়া হয়। যদিও বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে কোন প্রহরী দেখা যায়নি।
বারবার ঝরনায় প্রাণহানির কারণ কী?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঝরণা আয়তনে খুব ছোট। তবুও এতে পড়লে বা নামলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা ধরণের কথা প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন ঝরণা অতিপ্রাকৃতিক কিছু আছে৷ ঝরণায় নামলে তাদের টেনে নিয়ে যায় গভীরে।
তবে শিক্ষার্থীদের এই ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল। তিনি বলেন, এই ধরনের ধারণা সত্য না। ঝরণায় পড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারন হতে পারে উপর থেকে লাফ দেওয়ার কারনে মাথায় আঘাতজনিত কারণে রক্তক্ষরণ। মাথায় আঘাত লাগলে খুব দ্রুত মৃত্যু হয়।
একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঝরণার যে দিকটাতে পানি পড়ে সেখানে একটা গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝরণার পানিগুলো খুব ভারী। সাঁতার কাটার উপযোগী না। যারা খাদের কাছাকাছি নামেন তারা পানির স্রোতে খাদের নিচে চলে যান। আর সেখানে পাথরে ও শেওলার সাথে আটকে যান। আমরা ডুবুরিদের সাথে কথা বলে একই বিষয় জেনেছি।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন