চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিটির মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের সামনে মো. আলম (৪৫) নামের চাকরিজীবীকে খুন ও মুরাদপুর এলাকায় মো. সুজন (১৪) নামের মাদরাসা ছাত্রকে গুলি করে আহত করার অভিযোগে পৃথক দুই মামলা রুজু করা হয়েছে। দুই মামলায় প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আসামী করা হয়েছে ৭০২জনকে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পুলিশ দুই মামলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। এর পূর্বে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে সিটির ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলাটি করেন নিহত মো. আলমের ভাই জামাল উদ্দিন এবং একই সময়ে পাঁচলাইশ থানায় গুলিবিদ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রের মামা মোহাম্মদ রিদুওয়ান বাদি হয়ে অপর মামলাটি করেন।
ডবলমুরিং থানায় করা হত্যা মামলায় অন্য আসামীরা হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রাক্তন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রাক্তন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এমএ সালাম, প্রাক্তন সাংসদমহিউদ্দিন বাচ্চু, এমএ লতিফ, মো. দিদারুল আলম দিদার, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোলেমান আলম শেঠ, চসিকের প্রাক্তন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মোবারক, তৌফিক আহম্মদ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, আব্দুর সবুর লিটন, পুলক খাস্তগীর, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল, এসরারুল হক ও জহর লাল হাজারীসহ ২২৫ জন। মামলায় অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেন, ‘মো. আলম হত্যার ঘটনায় থানায় ২২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলা এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘গেল ৫ আগস্ট বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। গেল ৫ আগস্ট বিকালে সিটির ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনের সামনে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। বিপরীতে কিছু দুষ্কৃতকারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সিটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে। মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে আচানক দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া গুলি লাগে ভিকটিম মো. আলমের মাথায়। পরে মো. আলমকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মা ও শিশু ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ দিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গেল ১৮ জুলাই বিকালে মো. সুজন (১৪) নামে মাদরাসা ছাত্রকে গুলি করে আহত করার অভিযোগে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় হাছান মাহমুদ ও মহিবুল হাসানসহ ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী মাদরাসাছাত্র মো. সুজন (১৪) নোয়াখালী জেলার সদর থানার চরমোল্লা এলাকার বেরামারা গ্রামের মো. বেলালের ছেলে। সে চান্দগাঁও এলাকার আল জামিরুল হায়াত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ‘রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে মাদরাসা ছাত্রের মামা মোহাম্মদ রিদুওয়ান বাদি হয়ে থানায় মামলাটি করেন।’
মামলার উল্লেখযোগ্য বাকি আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চসিকের প্রাক্তন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রাক্তন সাংসদ মহিউদ্দিন বাচ্চু।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, ‘গেল ১৮ জুলাই বিকালে তার ভাগিনা মো. সুজন মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। মুরাদপুর এলাকার এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক শো-রুমের সামনে পৌঁছামাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কর্মসূচি চলাকালে আসামিদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তা গোলাগুলিতে রূপ নেয়। আসামিদের গুলিতে ঘটনাস্থলে থাকা মাদরাসা ছাত্র ও বাদীর ভাগিনা মো. সুজন তার ডান পায়ের হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হন এবং বহু পথচারী আহত হন। পরে সুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে অপারেশন করে তার পায়ের গুলি বের করা হয়।’
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন