শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

শিরোনাম

‘চুরি করা গম’ কেনায় বাংলাদেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন

শুক্রবার, জুন ২৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ার ‘চুরি করা’ গম কেনায় বাংলাদেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নালিশ দিয়েছে দেশটি। যেসব বাংলাদেশি কোম্পানি এসব গম কিনেছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন।

ভারতে নিযুক্ত ইউক্রনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা এ ব্যাপারে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো জবাব না দেওয়ায় এখন তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দারস্থ হয়েছেন।

রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকেই ইউক্রেনের বৃহৎ কৃষি অঞ্চল দখল করে রেখেছে। এরপর ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের আরও অঞ্চল দখল করে তারা।

ইউক্রেনের অভিযোগ, ওইসব অঞ্চলে উৎপাদিত গমই কিনেছে বাংলাদেশি কোম্পানি। যেগুলোকে ইউক্রেন ‘চুরি করা’ গম হিসেবে অভিহিত করেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, চুরি করা শস্য বা গম বলতে কিছু নেই। যেসব অঞ্চল তারা দখল করেছেন, সেগুলো আগে ইউক্রেনের অংশ ছিল, এখন এগুলো রাশিয়ার অংশ। আর এগুলো সারাজীবন রাশিয়ারই থাকবে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথির বরাতে জানিয়েছে, নয়াদিল্লিস্থ ইউক্রেনীয় দূতাবাস বাংলাদেশকে এ বছর এ ব্যাপারে একাধিক চিঠি দিয়েছে। সেগুলোতে বাংলাদেশকে রাশিয়ার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন গম কেনা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেগুলো রাশিয়ার কাভকাজ বন্দর থেকে বাংলাদেশে এসেছে।

এ ব্যাপারে দিল্লিস্থ ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশকুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তিনি বার্তাসংস্থটিকে বলেছেন, ঢাকা আমাদের চিঠির জবাব দেয়নি। এখন কিয়েভ বিষয়টিকে সামনে নিয়ে যাবে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, রুশ কোম্পানি ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চল থেকে গম কিনে সেগুলো রাশিয়ার গমের সঙ্গে মিশিয়ে এরপর সেগুলোর রপ্তানি করেছে।

তিনি বলেন, “এটি একটি অপরাধ। আমরা আমাদের গোয়েন্দা তথ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহকর্মীদের জানাব এবং তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাব।”

ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের এ কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি এর আগে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। বাংলাদেশ ও রুশ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্যে করেনি।

তবে এক বাংলাদেশি খাদ্য কর্মকর্তা বার্তাসংস্থাটিকে বলেছেন, যদি ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলে উৎপাদিত হয় তাহলে সেসব গম রাশিয়ার কাছ থেকে কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে এবং বাংলাদেশ চুরি করা কোনো গম আমদানি করেনি।

ইউক্রেনের দূতাবাস বাংলাদেশকে মোট চারটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে তাদের অধিকৃত ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল, কার্চ বন্দর এবং বার্দিয়াঙ্কস্ক থেকে যেসব জাহাজ এসব গম রাশিয়ার কাভকাজে নিয়ে গেছে সেগুলোর নাম ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বারও প্রদান করা হয়েছে।

এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত কাভকাজ থেকে এসব জাহাজ কবে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে এবং কবে এগুলো বাংলাদেশে পৌঁছাবে সেসবের তারিখও প্রদান করেছিল ইউক্রেন।

গত ১১ জুন এক চিঠিতে ইউক্রেন বাংলাদেশকে সতর্কতা দিয়ে বলেছিল, যদি বাংলাদেশ এসব গম গ্রহণ করে তাহলে ‘কঠোর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। এছাড়া এসব গম কেনা ‘মানবিক দুর্ভোগ’ বৃদ্ধি করে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে তারা।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র এনিটা হিপার রয়টার্সকে বলেছেন, ইউক্রেন যেসব জাহাজের নাম উল্লেখ করেছে সেগুলোর ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

রাশিয়ার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, যখন এসব গম জাহাজে লোড করা হয় তখন এগুলোর অরিজিন সম্পর্কে জানা খুবই কঠিন। ফলে কেউ বুঝতে পারে না এসব গম রাশিয়া নাকি ইউক্রেনে উৎপাদিত হয়েছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন