মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, কিউবার গুয়ানতানামো বে কারাগারে ৩০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বন্দি রাখার জন্য নতুন একটি বন্দিশালা নির্মাণ করা হবে। ট্রাম্পের দাবি— এই বন্দিশালায় স্থান পাবে সেইসব অভিবাসী যারা আমেরিকার জনগণের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত যারা “জঘন্যতম” অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য আমেরিকার সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
বিবিসি রিপোর্টে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়ানতানামো বে কারাগারে অভিবাসীদের রাখা হচ্ছে এবং এর ফলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কঠোর সমালোচনা করে এসেছে। ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে, নতুন বন্দিশালা বর্তমান গুয়ানতানামো কারাগারের স্থান থেকে আলাদা হবে এবং সেখানে অভিবাসীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। ট্রাম্পের ‘বর্ডার সিজার’ টম হোম্যান বলেন, সাগরে মার্কিন কোস্ট গার্ডের হাতে ধরা পড়া অভিবাসীদের সরাসরি গুয়ানতানামো পাঠানো হবে এবং সেখানে তাদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
নতুন বন্দিশালার নির্মাণে কত খরচ হবে এবং কখন এটি চালু হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে, মার্কিন সরকার জানিয়েছে যে, এই কারাগারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এই বন্দিশালাটি পরিচালনা করবে।
এদিকে, কিউবা সরকার এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল করার অভিযোগ তুলেছে এবং গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি রাখার এ পদক্ষেপকে ‘নৃশংসতা’ বলে অভিহিত করেছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল বারমুদেজ এক্স পোস্টে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা অবৈধভাবে দখল করা কিউবার ভূখণ্ডে অবস্থিত গুয়ানতানামো নৌঘাঁটির কারাগারে হাজার হাজার অভিবাসীকে জোর করে রেখে নির্যাতন করবে।” কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ এই পরিকল্পনাকে ‘মানবিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে একটি নতুন বিল পাস হওয়ার পরে, অবৈধ অভিবাসীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই বন্দিশালায় রাখা হবে। বিলটির অংশ হিসেবে, যেসব অভিবাসী চুরি, সহিংস অপরাধসহ অন্যান্য গুরুতর অপরাধে যুক্ত থাকবে, তাদেরকে বিচারের জন্য এই বন্দিশালায় রাখা হবে।
গত বছর, এক ভেনেজুয়েলা অভিবাসীর হাতে জর্জিয়ার এক নার্সের হত্যার ঘটনা সামনে আসার পর এই নতুন আইনের কথা উঠেছিল। আইনটির সমর্থকরা দাবি করেছেন, এটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। অপরদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন এবং বলছেন যে, অবৈধ অভিবাসীদের এইভাবে আটক করে রাখা তাদের অধিকারকে উপেক্ষা করা।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে থাকা বন্দিদের সংখ্যা বর্তমানে ১৫ জন, যা আগে শত শত ছিল। যদিও বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট, বিশেষ করে বারাক ওবামা, এই কারাগারটি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। গুয়ানতানামো বে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখযোগ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন যখন এই বন্দিশালার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে, তখন কিউবার সরকার তার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির অবৈধ অস্তিত্ব নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কিউবা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এই নতুন বন্দিশালার নির্মাণ এবং তার পরিচালনার বিষয়টি কংগ্রেসের কাছে অনুমোদন পাবে এবং এর জন্য কত খরচ হবে তা নির্ধারণ করবে কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে, এর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের আটক রেখে আরও মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে।
এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্টেন্স প্রজেক্টের ২০২৪ সালের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সাগরে ধরা পড়া অভিবাসীদের গোপনে গুয়ানতানামো বে কারাগারে এনে ‘অমানবিক’ অবস্থায় রাখছে। সূত্র: বিবিসি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন