রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

শিরোনাম

জোহরান মামদানি জিতেছেন, কিন্তু দল কি প্রস্তুত?

শনিবার, জুন ২৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক শহরে ঐতিহাসিক মোড় ঘুরিয়েছেন জোহরান মামদানি। সিটি প্রাইমারিতে ডেমোক্রেটিক মনোনয়ন নিশ্চিত করে তিনি শুধুমাত্র একটিমাত্র আসনের দখল নেননি—তিনি জিতে নিয়েছেন বহু মানুষের স্বপ্ন, এক নতুন রাজনীতির রূপরেখা। কিন্তু তাঁর এই বিজয়ে উচ্ছ্বাসের মাঝে এক বিষণ্ণতা লুকানো—ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে যে বিভক্তির রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তার নাম জোহরান।

বলা হয়, নেতৃত্ব অর্জনের পর প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হয়। মামদানির ক্ষেত্রে সেটাই যেন সত্যি। দলের কংগ্রেসনাল নেতৃত্ব—যারা একদিকে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করেন, অন্যদিকে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ তৈরি করেন—তাঁদের অনেকেই এখনও ‘সচেতন নীরবতা’ পালন করছেন। কেউ কেউ তাঁর বিজয়কে সম্মান জানালেও, প্রকাশ্যে পূর্ণ সমর্থন দিতে পিছিয়ে আছেন।

কংগ্রেসম্যান আদ্রিয়ানো এস্পায়াত, যিনি অতীতে গভর্নর কুওমোকে সমর্থন করেছিলেন, জোহরানের জয় নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। বলেছেন, “আমি মামদানির সঙ্গে কথা বলব। তারপর কিছু বলব।” এমন বক্তব্য আপাতত কূটনৈতিক শোনালেও, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে দলীয় দূরত্বের ইঙ্গিত।

আরেক কংগ্রেসম্যান জর্জ ল্যাটিমার বলেন, মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী হলেও তিনি এখনও বুঝে উঠতে পারেননি, এই নেতৃত্ব শহর চালানোর জন্য প্রস্তুত কি না।

এই দোলাচল ও দ্বিধা কেবল মতবিরোধ নয়—এ যেন দুই ধরনের রাজনৈতিক দর্শনের সংঘাত। একদিকে রয়েছে জেনারেশন জেড ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের জোয়ারে উঠে আসা এক নবীন নেতৃত্ব, অন্যদিকে পুরনো কাঠামোয় অভ্যস্ত প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব।

নিউইয়র্কেরই আরেক কংগ্রেসওম্যান লরা গিলেন মামদানির রাজনৈতিক অবস্থানকে “চরমপন্থী” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রস্তাবিত ‘ডিফান্ড পুলিশ’ বা পুলিশের বাজেট কমানোর মতো অবস্থান শহরের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

এমনকি কেউ কেউ তাঁর কিছু মন্তব্যকে “এন্টি-সেমিটিক” বলেও উল্লেখ করছেন—যদিও মামদানি স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি ধর্ম নয়, রাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করেছেন।

রাজনীতি মূলত একটি দলের মধ্যে ঐকমত্য গঠনের খেলা। কিন্তু মামদানির মতো একজন প্রগতিশীল তরুণ যখন গণজোয়ারে উঠে আসেন, তখন সেই পুরনো খেলার নিয়ম বদলে যায়। অনেকেই তারুণ্য ও আদর্শকে স্বাগত জানালেও, পুরনো কাঠামো তাদের মেনে নিতে অস্বস্তি বোধ করে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই অভ্যন্তরীণ সংকট নতুন নয়। তবে মামদানির বিজয় সেটিকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। একদিকে জনগণের ইচ্ছা—যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে, আশা দেখেছে, বদলের স্বপ্ন দেখেছে। অন্যদিকে, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বিধা—যা এখনো নির্ধারণ করতে পারছে না, তারা আদৌ এই নেতৃত্বকে গ্রহণ করবে কি না।

এই প্রশ্নগুলো এখন রাজনীতির আকাশে ভাসছে: কংগ্রেসনাল নেতারা মামদানিকে কখন এবং কীভাবে স্বীকৃতি দেবেন? মামদানি কি শহরের নির্বাচনে একক লড়াই করবেন? এই বিভাজন ভবিষ্যতে পার্টির ভিত কাঁপিয়ে দেবে না তো?

আজকের নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট দলের এক পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে। এখানে চলছে নতুন রাজনীতির জন্ম—আর তার প্রতীক হয়ে উঠেছেন জোহরান মামদানি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন