করোনাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চালু হওয়া ‘টাইটেল ফর্টি টু’অভিবাসী আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ১১ই মে। তাই শেষ সময়ে আইনটির সুবিধা পেতে অভিবাসীদের ঢল নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে। তাদের সামলাতে সীমান্তে আরও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বাইডেন প্রশাসন।
বৈধ কাগজপত্রের আশায় সীমান্তবর্তী অভিবাসন কেন্দ্রগুলোর বাইরে ভিড় জমিয়েছেন হাজারো মানুষ। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে তারা অপেক্ষা করছেন অনুমতিপত্রের জন্য। কেন্দ্রগুলোর বাইরে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
বহুল সমালোচিত এই আইন উঠে যাবার মুহূর্তে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তে কর্মকর্তারা বলছেন তাদের ধারণা আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আইন বদলানোর পর প্রতিদিন দশ হাজার করে অভিবাসীর ঢল নামবে সীমান্তে।
আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে কড়া রোদের মধ্যে শুকনো বালুর বিরান ভূমিতে এখনই শত শত মানুষ শুধু এই আইন উঠে যাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। অভিবাসন প্রত্যাশীরা বলছেন, তারা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সীমান্তে পৌঁছেছেন। যাদের লক্ষ্য আমেরিকায় প্রবেশ করা। যে দেশে পৌঁছনোর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে এসেছেন, সেই দেশ তারা দেখতে পাচ্ছেন বেড়ার ফাঁক দিয়ে। কিন্তু এদের কেউই জানেন না তাদের শেষ অবধি ওই বেড়া পার হতে দেয়া হবে কিনা।
রোজারিও মেডিনা নামে একজন বলেন, আবর্জনার স্তুপ ঘেঁটে তিনি তার নাতিনাতনিদের জন্য খাবার জোগাড় করছেন। শিশুদের বোতলে খাওয়ানোর পানি আনছেন দূষিত রিও গ্র্যান্ডে নদী থেকে। গত আট দিন ধরে সীমান্তে বসে আছেন তিনি। তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তার চোখ উপছে পানি গড়িয়ে পড়ল। সূর্যের প্রচণ্ড তাপে বাচ্চাদের ঠোঁটে ফোস্কা পড়ে গেছে।
এদিকে মঙ্গলবারই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন যে, কিছু সময়ের জন্য সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। কারণ মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় প্রবেশের জন্য বহু মানুষের অপেক্ষা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।
অভিবাসন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে চালু হওয়া এই আইনের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং কিছু কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্য বলেছেন এই নীতির কারণে বহু আশ্রয়প্রার্থী আমেরিকায় ঢুকতে পারছেন না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এখনও যুক্তি দেখাচ্ছেন বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হওয়া রুখতে এই আইনের প্রয়োগ এখনও বলবৎ রাখা উচিত। সীমান্তে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য তারা দুষছেন খোদ প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে।
ফলে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে অভিবাসন ইস্যুতে এই আইন ক্রমশই তীব্র একটা বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চে করোনাকালীন সতর্কতা হিসেবে কার্যকর করা হয়েছিল ‘টাইটেল-ফরটি টু’ আইন। এ পর্যন্ত ২৮ লাখ বার ব্যবহার করা হয়েছে আইনের। সব অভিবাসন প্রত্যাশীর জন্য এ আইন কার্যকর হলেও সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মেক্সিকো, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা ও এল সালভাদরের নাগরিকদের।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন