প্রয়োজনে মেগা প্রজেক্ট ধীরগতি করে জনগণের জন্য দ্রুত টিকা কিনতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে গণকর্মসূচির নামে প্রতারণা করছে। আজ সোমবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭০-৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে করোনাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকার যে মেগা প্রজেক্ট করছে, এগুলো প্রয়োজনে স্লো করে অন্য খাত থেকে টাকা নিয়ে বিশ্বের যে টিকার সোর্স রয়েছে সেখান থেকে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। আর তা না পারলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
বিএনপির করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত এক সপ্তাহ যাবত কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা ১০০-এর ওপরে এবং শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকার ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এর পূর্বে সরকারের অব্যবস্থা, দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণে সরকারের লকডাউন তামাশায় পরিণত হয়েছিল। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে বর্তমানে সীমান্ত জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল সতর্ক করার পরও সরকার কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরসহ চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করেনি। সরকারি ১০০ হাসপাতালের ৫২টিতে এবং ৩৫টি জেলার সদর হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার অভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর খবর প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। এ সব সুবিধার দাবি করে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও জেলা সিভিল সার্জনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলের তাগিদ সত্ত্বেও সরকার করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও করেনি। বরং সরকার করোনা পরীক্ষা নিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশে সামগ্রিকভাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ মানুষ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সারা বিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে টিকা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তখন সরকার একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদান ও একটি দেশকে খুশি করার জন্য চীনের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা আমদানির পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশে টিকা সংকট সৃষ্টি করে জনগণকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বের যে সব দেশ ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, সে সব দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদান করতে সমর্থ হয়েছে। তাই বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত যে, করোনা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি শুধু টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে টিকা সংগ্রহের বিষয় অনিশ্চয়তা জনমনে হতাশা, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিল এবং টিকার সম্পূর্ণ মূল্য অগ্রিম প্রদান করেছিল। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ সরবরাহের পর বন্ধ করে দেওয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। গত ১ জুলাই কোভেক্স থেকে আসা ফাইজার এবং চীনের উপহার সিনোফার্মের সীমিত টিকা নিয়ে সরকার লোক দেখানো গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। ফাইজারের টিকা শুধু সাতটি কেন্দ্রে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারের অব্যবস্থার কারণে প্রথম দিনেই ফাইজারের টিকা না পেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সামনে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেছে। বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তি দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা লাগে, কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে অতি শিগগিরই টিকা প্রদানের মাধ্যমেই একমাত্র করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে সরকারকে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করতে হবে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ, সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ সালাম।
করোনা পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন ক্রয়ে সরকারের নজির বিহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে চিকিৎসক নেতারা বলেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহে অনিশ্চয়তা হতাশা সবার মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন