চলমান ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সুপার টুয়েলভ থেকেই বিদায় নিশ্চিত হল বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এ নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ছয় উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম তিন ম্যাচে শ্রীলংকা-ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছিল টাইগাররা। এ জয়ে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে বেশ ভালভাবেই টিকে রইল দক্ষিণ আফ্রিকা। চার খেলায় তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর চার খেলায় চার হারে খালি হাতে টেবিলের তলানিতে বাংলাদেশ।
এ ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার এনরিখ নর্টি ও কাগিসো রাবাদা ঝড়ে মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৮ দশমিক দুই ওভার ব্যাট করতে পারে টাইগাররা। এর মধ্যে ৫৯ বলই ডট হয়। জবাবে ৩৯ বল বাকী রেখে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
প্রথম তিন ম্যাচে হেরে যাওয়ায় সপ্তম বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা এক রকম আগেই শেষই হয়ে গেছে। তবে অনেক যদি ও কিন্তুর উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল ভাগ্য। শেষ দুই ম্যাচে জিতলে ও গ্রুপের অন্য দলগুলোর হার সেমির লাইন-আপে সুযোগ করে দিতে পারে বাংলাদেশকে। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় টাইগাররা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে দুইটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। একাদশ থেকে বাদ পড়েন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। তাদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ হয় শামীম হোসেন ও নাসুম আহমেদের। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে আসর থেকে ছিটকে গেছেন সাকিব।
দেখেশুনে খেলার পথে প্রথম তিন ওভার বিপদ ছাড়াই পার করে দেন বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করা দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস। এ সময় দুইটি চারে ১৭ রান উঠে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে। একটি করে চার আসে দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে। তবে চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। ওভারের পঞ্চম বলে ১১ বলে নয় রান করা নাইমকে শিকার করেন রাবাদা।
দলীয় ২২ রানে নাইমের বিদায়ে ক্রিজে আসেন সৌম্য সরকার। ইনসুইং ইয়র্কার করেন রাবাদা। বল লাগে সৌম্যর পায়ে। লেগ বিফোরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন নাকচ করে দেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সৌম্যকে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠায় প্রোটিয়ারা। তাই এক বল খেলে শুন্য রানে ফিরেন সৌম্য। ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের তৃতীয় ওভারে আবারো দক্ষিণ আফ্রিকাকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান রাবাদা। রাবাদার বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে গালিতে রেজা হেনড্রিক্সকে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম। সৌম্যর মত খালি হাতে ফিরেন মুশফিকও।
রাবাদার সাথে উইকেট শিকারের মিছিলে যোগ দেন দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক পেসার এনরিখ নর্টি। ইনিংসের অষ্টম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন নর্টি। ঘাড়ের উপর ওঠা নর্টির বাউন্সার সামলাতে না পেরে আত্মসমর্পণ করেন মাহমুদুল্লাহ। আউট দিয়েছিলেন নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন টাইগার নেতা। কিন্তু রিভিউও বাঁচাতে পারেনি নয় বলে তিন রান করা মাহমুদুল্লাহকে।
মাহমুদুল্লাহ বিদায়ে উইকেট আসেন আফিফ হোসেন। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের করা নবম ওভারের প্রথম বলে মুখোমুখি হন আফিফ। প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেটে ছেড়ে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন আফিফ। সৌম্য-মুশফিকের পর শুন্য হাতে ফিরেন আফিফও। এতে ৩৪ রানে পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সতীর্থদের বিদায় অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন লিটন। সাবধানে খেলে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি। তবে ১২তম ওভারে লিটনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাবরাইজ শামসি। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে না পারা লিটন ৩৬ বল খেলে মাত্র একটি চারে ২৪ রান করেন।
৪৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনে, দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটির প্রয়োজন ছিল টাইগারদের। সেটি করার চেষ্টা করেন এবারের আসরে প্রথম বারের মত খেলতে নামা শামীম ও মাহেদি। সুবিধা করতে পারেননি শামীম। ২০ বলে ১১ রান করে শামসির দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। মাহেদির সাথে ২৫ বলে ১৯ রান যোগ করেন শামীম।
বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলা মাহেদি শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন। দুইটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি। বাংলাদেশ ইনিংসে চারটি চার ও একটি ছক্কা আসেম যার মধ্যে তিনটি মাহেদির ব্যাট থেকে।
লো
য়ার-অর্ডারে তাসকিন আহমেদ তিন ও নাসুম আহমেদ শুন্য রান করেন। এতে ১৮ দশমিক দুই ওভারে ৮৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটিই টাইগারদের সর্বনিম্ন রান।
নর্টি তিন দশমিক দুই ওভারে মাত্র আট রানে তিন উইকেট নেন। রাবাদা চার ওভারে ২০ রানে তিনটি ও শামসি ২১ রানে শিকার করেন দুই উইকেট।
মাত্র ৮৫ রানের পুঁজি নিয়ে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন দলের পেসার তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে ব্যক্তিগত চার রানে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তাসকিন। শুরুতে উইকেট হারালেও দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তিনটি চারে দক্ষিণ আফ্রিকার রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। এর মধ্যে মাহেদির করা পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পরপর দুইটি চার মারেন ডি কক। তবে পঞ্চম বলে ডি ককের উইকেট উপড়ে ফেলেন মাহেদি। ১৫ বলে ১৬ রান করেন ডি কক। পরের ওভারে ফের উইকেট শিকার করেন তাসকিন। ডি ককের বিদায়ে উইকেটে আসা আইডেন মার্করাম রানের খাতা খোলার আগেই স্লিপে নাইমকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ফলে ৩৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন রাসি ভান ডার ডুসেন ও অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। দ্রুত রান তোলার জন্য তাড়াহুড়া করেননি তারা। উইকেটে টিকে থাকাই মূল লক্ষ্য ছিল তাদে। এতে ১২ ওভার শেষে তিন উইকেটে ৬৭ রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুমের করা ১৩তম ওভারে শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচে ভাঙ্গে ডুসেন ও বাভুমার ৪৩ বলে গড়ে উঠা ৪৭ রানের জুটি। ২৭ বলে দুইটি চারে ২২ রান করেন ডুসেন। তখন জয় থেকে পাঁচ রান দূরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর ডেভিড মিলারকে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাভুমা। ২৮ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৩১ রান করেন বাভুমা। পাঁচ রানে অপরাজিত থাকেন মিলার। বাংলাদেশের তাসকিন চার ওভারে ১৮ রানে দুই উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন মাহেদি-নাসুম। ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাবাদা।
আগামী ৪ নভেম্বর গ্রুপ পর্বে নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন