বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

ট্রাম্পের মুখে ‘বর্ণবাদের দুর্গন্ধ’

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সোমালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেছেন। বলেছেন, সোমালিয়া দুর্গন্ধযুক্ত। এমনকি তিনি সোমালি বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেট কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরকে ‘আবর্জনা’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।

এনবিসি, আল-জাজিরা ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই বিবৃতিগুলো তার অভিবাসন-বিরোধী নীতির ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে এবং মার্কিন রাজনৈতিক পরিবেশে বর্ণবাদী আলোচনার স্পষ্ট লক্ষণ।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্পের বক্তব্যগুলো কোনো সাধারণ অপমান নয়। বরং বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং অভিবাসী-বিরোধী মনোভাবকে উসকে দেওয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।

এনবিসি বলেছে- ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দেখিয়েছেন যে, বর্ণবাদ তার জন্য জিহ্বার স্খলন বা ব্যক্তিগত অপমান নয়, বরং তার রাজনৈতিক কৌশলের ভিত্তিপ্রস্তর।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সোমালিয়াকে ‘দুর্গন্ধযুক্ত’ দেশ বলে অভিহিত করেন এবং মুসলিম কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরকে ‘আবর্জনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন, তখন তিনি তার সামাজিক ভিত্তিকে এই স্পষ্ট বার্তা পাঠাচ্ছেন যে- অভিবাসী, মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গরা শত্রু এবং তাদের একঘরে করা উচিত।

ট্রাম্পের এই নীতিটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন কর্মকর্তারা সর্বদা সমান অধিকার এবং সে দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন।

পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার ইস্যুকে অনেক দেশকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্প রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে তার ভোটারদের একত্রিত করার জন্য অভিবাসী-বিরোধী মনোভাবকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আফ্রিকান এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করে তিনি ভয় এবং ঘৃণাকে রাজনৈতিক মূলধনে পরিণত করেছেন।

মিনেসোটায় সোমালি নাগরিকদের সুরক্ষিত মর্যাদা বাতিল, মুসলিম প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ এবং এখন সরাসরি মৌখিক আক্রমণ – এ সবই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকান পরিচয়কে দৃঢ় করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের অংশ।

এছাড়া কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরের ওপর সরাসরি আক্রমণ থেকে এটাও বোঝা যায় যে, ট্রাম্প তার রাজনৈতিক ঘাঁটিতে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাকে মুসলিম অভিবাসী এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

২০০০ সালে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ওমর এবং এখন একজন নাগরিক, বারবার ব্যক্তিগত এবং অবমাননাকর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। কারণ ট্রাম্প ২০২৫ সালের একটি প্রচারণা সমাবেশে তাকে আবারও ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেছেন; এই পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে যে ওমরের উপর আক্রমণ একটি চলমান কৌশলের অংশ, কোনো একক ঘটনা নয়; মিনেসোটা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুসারে, সোমালি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংস হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসীদের ‘অতিরিক্ত বোঝা’ এবং ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প কার্যকরভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ শত্রুতে পরিণত করেছেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক বিভাজনকে আরও গভীর করেছে এবং আমেরিকান রাজনৈতিক পরিবেশকে বিপজ্জনক মেরুকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অন্যদিকে, এ ঘটনার আন্তর্জাতিক মাত্রাও তাৎপর্যপূর্ণ। যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ভাষায় একটি দেশকে বর্ণনা করেন, তখন এই মন্তব্যগুলো কেবল সেই দেশের অভিবাসীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং আফ্রিকান দেশগুলো এবং ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে।

এ ধরনের বক্তব্য পারস্পরিক আস্থা কমানো, কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমেরিকার অবস্থানকে দুর্বল করে তুলতে পারে। আফ্রিকান দেশগুলো এই মন্তব্যগুলোকে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় মর্যাদার সরাসরি অপমান বলে মনে করে এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হবে।

প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের বর্ণবাদী অবস্থান কেবল দুর্গন্ধই ছড়ায় না বরং বিপদের গন্ধও ছড়ায়। এমন একটি বিপদ যা একজন প্রেসিডেন্টের কথা দিয়ে শুরু হয় এবং পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক বিভাজন এবং কূটনৈতিক সংকটে শেষ হতে পারে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন