পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার রক্তক্ষয়ী অগ্রযাত্রা চলমান রয়েছে। দেশজুড়ে রাতভর প্রাণঘাতী বিমান হামলা চলছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার তেল শোধনাগার ও জ্বালানি স্থাপনাগুলো নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ক্রেমলিন নিশ্চিত করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শিগগিরই একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে। বুধবার (৬ আগস্ট) ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এসেছি (যুদ্ধ) শেষ করতে।’ খবর বিবিসির।
মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনা হলেও শান্তিপূর্ণ কোনো সমাধান আসেনি। ট্রাম্প আশা করছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়তো এবার যুদ্ধবিরতি সম্ভব হতে পারে। তবে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ব্যবধান এতটাই গভীর যে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়ও সমাধান কঠিন হতে পারে।
গত জুনে ইউক্রেনকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে রাশিয়া ‘চূড়ান্ত সমঝোতা’র জন্য কঠোর শর্ত তুলে ধরে। এতে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে রুশ সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ, নিরপেক্ষতা, বিদেশি সামরিক সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধকরণ ও নতুন নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া লিখেছেন, ‘রাশিয়া এটিকে নানা ভাষায় উপস্থাপন করতে পারে, যাতে মনে হয় তারা ছাড় দিতে প্রস্তুত। কিন্তু মূল অবস্থান অপরিবর্তিত। আর তা হলো, কিয়েভকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
প্রেসিডেন্ট পুতিন ও মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের বৈঠকের পর বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘ওয়াশিংটন এখন ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে কোন শর্তে রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হতে পারে। এসব শর্ত পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা অজানা। তবে গত সপ্তাহে পুতিন বলেছেন, জুনে যে লক্ষ্য তারা ঘোষণা করেছে, তা অপরিবর্তিত রয়েছে।’
ফলে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের বিষয়ে ক্রেমলিনের সম্মতি দেখা গেলেও রাশিয়ার কঠোর শর্ত থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ নেই।
তবে পুতিন কেন আলোচনায় রাজি হচ্ছেন?
এর একটি কারণ হতে পারে যে, সংলাপের মাধ্যমে ট্রাম্পের আরোপিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এড়ানো সম্ভব হবে, যা শুক্রবার থেকেই মস্কোর বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর আরোপ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ক্রেমলিন হয়তো এটাও মনে করছে যে, তারা ট্রাম্পকে যুদ্ধ শেষ করার শর্তগুলোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হবে।
দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পকে ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল মনে হয়েছে। তিনি জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য দোষারোপ করেছেন। যদিও পরে পুতিনের প্রতি তার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন— এপ্রিল মাসে বলেন, ‘সে শুধু সময় নষ্ট করছে’— তবুও তিনি স্পষ্টভাবে বলেননি, পুতিন তার কাছে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন কিনা।
ব্যক্তিগত পছন্দ হোক বা বৈশ্বিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে হোক, ট্রাম্প পুতিনের কাজের জন্য তাকে পুরোপুরি নিন্দা জানাতে সবসময়ই অনিচ্ছুক ছিলেন। ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে তার প্রথম মেয়াদের সাক্ষাতের সময়, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের বিষয়ে ট্রাম্প ক্রেমলিনের পক্ষ নেওয়ায় এবং মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করায় অনেকেই হতবাক হয়েছিলেন।
ট্রাম্প যাতে পুতিনের দ্বারা প্রভাবিত না হন, সে কারণেই কিয়েভ সম্ভবত যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনাতে নিজেদের যুক্ত রাখতে চায়। ট্রাম্প তার দূতের মাধ্যমে পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে পুতিন শর্ত এখনো পূর্ণ না হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইউক্রেনে আশঙ্কা, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবিতে রাজি হয়ে যেতে পারেন। বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন বৈঠককে ভয় পায় না এবং রাশিয়ার কাছ থেকেও একই সাহসী মনোভাব প্রত্যাশা করে।’
কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দূরত্ব এখনো রয়ে গেছে। আর যদি ক্রেমলিন শেষ পর্যন্ত একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সম্মত হয়, মস্কোর যুদ্ধবিরতির দাবিগুলো এতটাই অনমনীয় যে, জেলেনস্কি এবং পুতিনকে মুখোমুখি বসিয়ে কী লাভ হবে তা স্পষ্ট নয়।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন