শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
Republican presidential candidate and former U.S. President Donald Trump gestures at a campaign event ahead of the Republican presidential primary election in North Charleston, South Carolina, U.S. February 14, 2024. REUTERS/Sam Wolfe

ভোটের পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও বিশ্লেষকদের অনেকে একে হিন্দু আমেরিকানদের ভোট পাওয়ার কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্সে’ ট্রাম্পের ওই বার্তায় দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমার প্রশাসনের অধীনে, আমরা ভারত এবং আমার ভালো বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমাদের মহান অংশীদারিকে আরো শক্তিশালী করব।

আবার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে তিনি ‘চরম বিশৃঙ্খল’ বলে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এমনটি হতো না।

ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে কী প্রভাব পড়তে পারে—এমন প্রশ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের কাছে। জবাবে কালের কণ্ঠকে কুগেলম্যান বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত।

ভোটের কিছু দিন আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী আসনগুলোর ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। তবে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কী ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে তার ইঙ্গিত হিসেবেও আমাদের দেখা উচিত।’

কুগেলম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভালোভাবে নেবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি অতীতে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন।

তাই ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার হোয়াইট হাউসে ফেরেন, তাহলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে এবং ওই চ্যালেঞ্জ সামলাতে কী কাজ করা উচিত তা অনুধাবনের জন্য এটি একটি ঘুম-ভাঙানিয়া বার্তা।’

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আজকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হলে কি বাংলাদেশের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন নীতিই অব্যাহত থাকবে—এ প্রশ্নও ছিল কুগেলম্যানের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন নীতি অনেকাংশেই অব্যাহত থাকবে। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি প্রণয়নে কমলা হ্যারিসের বড় ভূমিকা ছিল—এমনটি আমি মনে করি না। তবে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির আদলে চলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো রুদাবেহ শহীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘এক্স’ বার্তায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। তবে বিষয়টি কিভাবে এসেছে তা মার্কিন প্রশাসনের প্রতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দাবিগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে। এ সপ্তাহেই কার্নেগি এনডোমেন্টের এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচয় দেওয়া ভারতীয় আমেরিকানদের হার কমে ৪৭ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালে এ হার ছিল ৫৬ শতাংশ।

রুদাবেহ শহীদ বলেন, ভারতের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা সত্ত্বেও কমলা হ্যারিসের প্রতি ওই সম্প্রদায়ের সমর্থন মাত্র ৬০ শতাংশ। অথচ চার বছর আগে ভারতীয় আমেরিকানদের প্রায় ৭০ শতাংশ বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। এদিকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

রুদাবেহ শহীদ আরো বলেন, ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকারের সময় মেরুকরণ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও পড়েছে। হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা ভারতে সংখ্যালঘুদের দুর্দশার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তবে তারা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দুর্দশার ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। আর এ কারণেই ট্রাম্প সম্ভবত ‘সুইং স্টেট’গুলোতে বসবাসকারী ভারতীয় আমেরিকানদের এবং আমেরিকায় সবচেয়ে ধনী নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে তাঁর ভোটব্যাংক সুসংহত করতে চাচ্ছেন। এটি বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের জন্য যতটা না সরাসরি বার্তা, তার চেয়েও বেশি বার্তা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভারতীয় আমেরিকানদের জন্য।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ে রুদাবেহ শহীদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কিছু পর্যবেক্ষক বলেন, ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান—যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে মার্কিন নীতি মোটাদাগে কাছাকাছিই থাকে, তবে চীনকে মোকাবেলা করার কৌশলে ভিন্নতা থাকতে পারে।

রুদাবেহ শহীদ বলেন, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং বড় পরিসরে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যা ঘটছে তা মোকাবেলায় ভারতকে আরো কাজ করার সুযোগ দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে ক্ষমতায় থাকাকালে ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকার ও জলবায়ু ইস্যুতে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু ডেমোক্রেটিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ইউনূসের সুসম্পর্কের বিষয়টি আমরা জানি। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তরসহ আরো কিছু কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। হোয়াইট হাউসে কে দায়িত্বে আছে সম্ভবত এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো বলেন, ‘ট্রাম্প জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আশাবাদী হলেও হতে পারেন। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের বিষয়ে ভারতকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ট্রাম্প তাঁর ‘এক্স’ বার্তায় বলেছেন, ক্ষমতায় এলে আসলেই তা দেন কি না তা দেখার বিষয় হবে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসন শুরু থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরব ও সক্রিয় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারতের দৃষ্টিতে দেখে না। শেখ হাসিনার সরকারের শেষ কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন ছিল। গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানো, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা চালুর নজির সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় নেওয়া বৈশ্বিক নীতিগুলোর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।

Views: 13

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন