শনিবার, ০২ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকায় কী কী রাখা উচিত?

শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস বর্তমানে বিশ্বজুড়ে একটি সাধারণ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে পরিণত হয়েছে। জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে সময়মতো শনাক্ত করে যদি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ মেনে চলা যায়, তাহলে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি মূল বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস), ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) এবং ড্রাগ (ওষুধ)। এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস বা ডায়েটকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্য তালিকা নির্ধারণ

ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা, পেশা, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, আর্থিক অবস্থা ও কায়িক শ্রমের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করা উচিত। অনেকেই মনে করেন, ডায়াবেটিস হলে অনেক খাবার একেবারে বর্জন করতে হয়। বাস্তবে তা নয়। একজন ডায়াবেটিক রোগীও অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন, তবে সেগুলোর পরিমাণ ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা পৃথকভাবে নির্ণয় করা হয়। বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, কায়িক শ্রমের পরিমাণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, আর্থিক অবস্থা—সবকিছু বিবেচনায় রেখে এ তালিকা করা হয়। ডায়াবেটিস হলেই যে অনেক ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, এমনটি নয়।

তবে খাবার নির্বাচনে সতর্ক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে রোজ একই ধরনের খাবার না খেয়ে বৈচিত্র্য আনারও চেষ্টা করতে হবে। অন্য সাধারণ মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী সব কটি খাদ্য উপাদান মানে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।

ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই চিকিৎসকেরা প্রথমেই সাদা চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিতে বলেন। শর্করা এবং চিনি অন্যান্য খাবারেও আছে। কাজেই সাদা চিনি সরাসরি বাদ দিলেও কোনো সমস্যা নেই। শর্করাসমৃদ্ধ খাবার হলো ভাত, নুডলস, রুটি ইত্যাদি। তবে এই খাবারগুলো সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে থাকা উচিত ক্যালরির সুষম বণ্টন। এতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্যালরি আসবে শর্করা থেকে, বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমিষ বা প্রোটিন থেকে এবং বাকিটা স্নেহ বা ফ্যাট থেকে।

সারা দিনের মোট ক্যালরির প্রায় ৩০ শতাংশ সকালের নাশতা থেকে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দুপুরের খাবার থেকে এবং ২০ শতাংশ রাতের খাবার থেকে গ্রহণ করতে হবে। বাকি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দুই থেকে তিনবারের হালকা স্ন্যাক্স হিসেবে নিতে হবে। খাবার বাছাইয়ের সময় খেয়াল রাখতে হবে খাবারে গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বা জিআই কতটুকু আছে। যেসব খাবারে জিআইয়ের মান কম সেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।

খাদ্যতালিকায় শর্করা ও ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ

সাদা চিনি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়াই উত্তম। তবে শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, নুডলস বা রুটি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া নয়—সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনের মোট ক্যালরির ৫০–৬০ শতাংশ শর্করা, ২০–২৫ শতাংশ আমিষ এবং ১৫–২০ শতাংশ চর্বি থেকে আসা উচিত।

সারা দিনের ক্যালরির ৩০ শতাংশ সকালের নাশতা, ২৫–৩০ শতাংশ দুপুরের খাবার এবং ২০ শতাংশ রাতের খাবার থেকে গ্রহণ করা উত্তম। বাকি ক্যালরি ২–৩ বারের হালকা স্ন্যাক্স থেকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগীদের আমরা সাধারণত লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েটের পরামর্শ দিই। এ ক্ষেত্রে ‘‘মেডিটেরিয়ান ডায়েট’’ বা মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যাভ্যাসটা খুব কার্যকর। এই খাবারগুলোতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা ভাতের বদলে রুটি খেলে উপকার বেশি পাবেন। রুটি খেলে কী পরিমাণ ক্যালরি শরীরের ভেতরে গেছে, এটার একটা হিসাব রাখা যায়। ভাত খেলে সেই হিসাবটা রাখা একটু কঠিন।’

দুধ খাওয়া কতটা জরুরি?

ডা. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘‘দুধ সব মানুষের জন্যই দরকারি। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে চর্বিমুক্ত বা স্কিমড দুধ খাওয়াই ভালো।’’ বর্তমানে বাজারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ ধরনের ‘স্পেশালাইজড মিল্ক’ পাওয়া যায়, যা এক বেলার খাবার হিসেবেও উপযুক্ত।

জলপান ও শরীরচর্চা
ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। তবে সফট ড্রিংক, চিনিযুক্ত ফলের জুস পুরোপুরি বাদ দেওয়া দরকার।

এছাড়া, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা ব্যায়াম বা সাইক্লিং করলে ইনসুলিন কার্যকারিতা বাড়ে এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মানসিক প্রস্তুতি ও পারিবারিক সহায়তা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মানসিক ইতিবাচকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন, অথচ খাদ্য, ব্যায়াম ও নিয়ম মেনে চললেই এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। পাশাপাশি, পরিবারের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে খাওয়ার সময় ঠিক রাখা, স্বাস্থ্যকর রান্না করা এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া পরিবারেরই কাজ।

এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য ‘স্পেশালাইজড মিল্ক’ পাওয়া যায়, যা দুধের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি একবেলা খাবারের আদর্শ বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন