মোহাম্মদ সাঈদ »
সা¤প্রতিক সময়ে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা বেড়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এই আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইন কার্যকরের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দাবি উঠেছে আইনটি বাতিল করে দেয়ার বা ব্যাপক সংশোধনের।
শুরু থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারায় আপত্তি দিয়েছিল বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ। আইনের ২০টি ধারার ১৪টির ক্ষেত্রেই অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য। পুলিশকে নিছক সন্দেহের কারণে এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়ায় এবং অভিযোগকে আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য করায় আইনটি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশে বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেও হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।
কারো কারো মতে,ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নৈতিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ম‚ল্যবোধের পরিপন্থী। এ আইন তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
মুশতাক আহমেদ এবং অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/২৫(১)(খ)৩১/৩৫ ধারায় মামলা দেয়া হয়। এর মধ্যে ২১ ধারার অপরাধ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য। মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, মুশতাক আহমেদ এবং আসামীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব, সরকার বিরোধী পোস্টের মাধ্যমে সমাজে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধ করেছিলেন। লেখক মুশতাক আহমেদ ৬বার জামিনের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তাকে জামিন দেয়া হয়নি। মৃত্যুর আগে প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় হয়রানির সুযোগের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও শুরু থেকেই আইনটি নিয়ে আপত্তি ছিল।
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিল্পী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গার্মেন্টসকর্মী থেকে শিক্ষক ছাত্র পর্যন্ত আসামী হয়ে জেল খেটেছেন।
এ আইনের ৪৩ ধারায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ এবং আটকের অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর আইনে ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রের ভাবম‚র্তী ক্ষুণ্ন করা, ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত বা উস্কানি, মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলোতে বিভিন্ন ধারায় অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ আছে বলে অনেক মামলার তথ্যে উঠে এসেছে।
কথা বলার অধিকার আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ অধিকার। এই অধিকারটাকে একেবারে পরিকল্পনা করে কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং সবচেয়ে কঠিনভাবে।
পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের হুমকি স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ যখন স্রেফ সন্দেহবশত ও পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পায় তখন গ্রেপ্তারের ঝুঁকি প্রত্যেক সাংবাদিকের মাথার ওপর ডেমোক্লেসের খড়গের মতো সব সময় ঝুলতেই থাকবে, মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকৃত সাংবাদিকতার সব পন্থা বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের সংবাদমাধ্যম নিছকই জনসংযোগ কর্মকাÐ ও প্রচারণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে উঠতে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ আইনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন অনেকেই।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কিছুদিন আগে বিবিসিকে বলেছিলেন, এই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না, এমন একটি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে বা আরো করে যাবে। বিশ্বের বহু দেশ এখন আর হেয় করে না। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশের তালিকার দিকে আমরা যাচ্ছি। রিপোর্ট বলছে, নানা ধরনের অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগ হয়েছে। তাই যারা আইনের অভিজ্ঞ আছেন তাদের মতামত নিয়ে ঢালাওভাবে পরিবর্তন করার উপযুক্ত সময়। তবে বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করে এগিয়ে চলা কি সহজ হবে?
মোহাম্মদ সাঈদ
প্রেসিডেন্ট, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন