বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ডিপ্রেশন কেন হয়? জেনে নিন মুক্তির পথ

শনিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

লাইফস্টাইল প্রতিবেদন: কোন ব্যাপারে কষ্ট পেলে বা চিন্তা করতে থাকলে সেই চিন্তা শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ভারসাম্য ব্যাঘাত ঘটায় শরীরের হরমোনের। আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের চাহিদাকে সবক্ষেত্রে এতটাই বেশি করে ফেলি যে, তার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলেই সেটাই আমাদের মানসিক অবসাদ এ পরিণত হয়। আর দিনের পর দিন এটা চলতে থাকলে সেটা ডিপ্রেশনে রূপান্তরিত হয়।

যে কেউ ডিপ্রেশনের কবলে পড়তে পারে। তবে, সকলের ডিপ্রেশনের কারণ এক নয়। মানুষের জীবনযাত্রা যেমন আলাদা ঠিক তেমনই ডিপ্রেশনও আলাদা। একজন ব্যক্তি অট্টালিকার উপরে বসে থাকলেও তার জীবনে ডিপ্রেশন উঁকি দিতে পারে। আবার একজন নুন ভাত খেয়েও শান্তিতে দিন যাপন করতে পারে। তাই, ডিপ্রেশনের সাথে অর্থের কোন সম্বন্ধ নেই।

কি কি কারণে ডিপ্রেশন ঢুকে জীবনে:

অপমান বোধ: যদি কোন ব্যক্তি অন্য একজনের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয়, তাহলে যখন তার মনের মধ্যে চরম আঘাত লাগবে, তখন সে ডিপ্রেশনে ভুগবে। এটা দেখা দেয়, যারা একটু লাজুক ধরনের মানুষ, যাদের আত্মমর্যাদাটা অন্যের কথার উপরে নির্ভর করে, নিজেকে সব সময় অন্য সবার থেকে কম ভাবে, যারা নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে তাদের ডিপ্রেশনে ভোগার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

একাকিত্ব: কোন মানুষ যদি বহু লোকজন পছন্দ করে, কোলাহল পছন্দ করে, কিন্তু কোন কারণে সে যদি পরে একাকী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় কিংবা অন্য কারো কথায় আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সে তখন নিজেকে অসহায় বোধ করে এবং একাকিত্বের যন্ত্রণা তার মনে অসহ্য হয়ে কাটার মত বিঁধতে থাকে আর পরবর্তী সেটাই ডিপ্রেশনেন পরিণত হয়। কিংবা যারা দিনের পর দিন একা থাকে, বিশেষ কারো সাথে মেশে না তারাও বহু সময় নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে অসহায় ব্যক্তি মনে করে ডিপ্রেশনে ভোগে।

বংশগত কারণ: কিছু কিছু পরিবারে এমন বহু ব্যক্তি থাকেন, যারা তাদের বংশের বোঝা বয়ে ডিপ্রেশনের শিকার হন। এদের সব বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। একটা সহজ সরল কথাও সহজভাবে না ভেবে জটিল আকার তৈরি করে। ফলে, নার্ভে সব সময় চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময়ের পরে মনে ডিপ্রেশন বাসা বাঁধে। এমন বহু পরিবারই আছে, যাদের বংশে একজন না একজন ডিপ্রেশনের শিকার হয়।

বর্তমান জীবনে কোন বড় পরিবর্তন এলে: মানুষের জীবন সব সময় এক নিয়মে চলে না। চলতি পথে এমন বহু সময় আসে, যেই সময়টা সারা জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ সময়ে যারা নিজেকে সামলাতে জানে, তারা বহু দৃঢ় এগিয়ে যায়। কিন্তু, যারা এ ধাক্কা সামলাতে না পারে, তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। ধরুন, কেউ একজন কোন বড় অফিসে চাকরি করেন। কোন একটি কারণে তার চাকরিটা চলে গেল। এ সময় তার আগের জীবন যাত্রায়  পরিবর্তন আসবে, তার পরিবারের বিলাসিতা বন্ধ হবে, তার চলার ধরন পাল্টে যাবে। ফলে, এ সময় সে যদি নিজেকে শক্ত করে না ধরে থাকতে পারে, তাহলে তার মনে ডিপ্রেশন আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাই, জীবনে আচমকা যদি কোন বড় পরিবর্তন আসে, তাহলে তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ডিপ্রেশনের লক্ষণ: হতাশা, রাগ, দুঃখ, সব সময় মন খারাপ হওয়া ভাব,মনে সংশয়, দোদুল্যমানতা, বিরক্তি, খিদে ও ঘুম ভীষণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না করা, শব্দ বা আলোতে বিরক্তি, আচানক প্ল্যানিং ছাড়াই দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা, সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগা, কোন কিছুতে ই আনন্দ না পাওয়া বা মনোনিবেশের অভাব, পুরো শরীরের, হাতে পায়ে ও পেটে  ব্যথা অনুভব করা,ক্লান্তি, নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা। এর মধ্যে যে কোন পাঁচটি বা ততোধিক লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কারণ, এসব সমস্যা বেশি দিন ধরে পুষে রাখা মানে রোগকে আরো জটিল করা। অর্থাৎ, মাইনর ডিপ্রেশন টার্ন করতে পারে মেজর ডিপ্রেশনে। অবশ্য ডিপ্রেশনকে কোন অর্থেই কিন্তু জটিল রোগ বলা উচিত হবে না। বরং, এটাকে বলা যেতে পারে অসুবিধা। এটা মন খারাপ থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে যেতে পারে কমতে পারে জীবনের মান।

মেজর ডিপ্রেশন: যখন ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো অত্যন্ত প্রকটভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বহাল তবিয়তে থাকে অথবা কিছু দিন পর পরই দেখা দেয় তখন তাকে মেজর ডিপ্রেশন বলে। মেজর ডিপ্রেশন থেকেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

মাইনর ডিপ্রেশন: মাইনর ডিপ্রেশন জীবনের কোন একটা সময়ে কোন দুঃখজনক ঘটনা বা পরিবেশের কারণে দেখা দেয়। এ সময় কাছের মানুষের সান্নিধ্য ভীষণ প্রয়োজন হয়।

অ্যাটিপিকাল ডিপ্রেশন: এটা মেজর ডিপ্রেশনেরই একটা ধরণ। যদিও এক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এ সময় মানুষের সাথে কথা বলা উচিত। মনোরম পরিবেশে যাওয়া দরকার তাহলে কিছুটা হলেও মন থেকে ডিপ্রেশন চলে যাবে।

অবসাদগ্রস্ত মানুষ জনের রক্তে ভিটামিন ডির অভাব থাকলেও ডিপ্রেশন আসে। তবে, ভিটামিন ডির সাথে ডেফিশিয়েসের মধ্যে অবসাদ বা ডিপ্রেশন সম্পর্ক নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়: ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন এবং সাথে আরো বেশি করে প্রয়োজন কাছের কোন মানুষের। যে তাকে খুব ভাল করে বোঝে, জানে ও মনের যত্ন নিতে পারবে- এমন কোন প্রিয় মানুষ তাকে একটু সাথে দিলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে উঠবে। এছাড়াও, মেডিসিন, দেহের ওজন বাড়তে দেবেন না, পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কোন সমস্যা নয়, সমস্যা হল মানসিক অবসাদের কবলে পড়া। যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে নিজে খুশি না হয়, নিজের খুশির ভার তুলে দেয় অন্যের হাতে, নিজের ভাল থাকাটা নির্ভর করে অন্যের উপরে তখনই মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। কারণ, আপনি তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আপনাকে কেউ কম ভালবাসলে আপনি কষ্ট পান, আপনাকে কেউ দেখতে খারাপ বললে আপনি দুঃখ পান, কেউ আপনার থেকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে আপনার নিজেকে অপরাধী মনে হয়, তার মানে আপনার হাতে কিছু নেই আপনি জীবন নির্ভর করেন অন্যের ইচ্ছা অনুসারে তাহলে আপনাকে এক বার নয় বার বার ডিপ্রেশনে ভুগতে হবে। তাই, ডিপ্রেশনের হাত থেকে বাঁচতে পেতে চাইলে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

সিএন/আলী

Views: 2

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন