আবছার উদ্দিন অলি: শুভ নববর্ষ। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। বৈশাখ নিয়ে আসে, মানুষে মানুষে প্রীতি মিলন। নববর্ষের শুভবাণী, শুভ সম্ভাষন। আজকের এই দিনে ভরে উঠুক উৎসবে আনন্দে সবারি মন। বাংলার প্রকৃতি, বাংলার ইতিহাস, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা বীর বাঙালরি গর্ব, নতুন আশা বুকে নিয়ে কাটাবো এ জীবন। নতুন করে সুখেরি স্বপ্ন দেখে দেশের মানুষ, ভালো করে বাঁচার আশায় ভরে তোলে বুক। মাঠে মাঠে সোনা ফলে ভরে কিষানের মন। তারুণ্যের নতুন বৈশাখ বাংলা নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষ আসে নতুনের কেতন উড়িয়ে। এইতো বসন্তে প্রকৃতি নব সাজে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সেই উজ্জ্বলতার রং আমাদের মনেও লেগেছে। তাই বসন্তের শেষে বাংলা নববর্ষের সূচনায় প্রকৃতির সান্নিধ্য এসে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে বাঙালি। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় উৎসব। সমাজে পুরাতন মানুষের নানা অচলায়তনের বাধা প্রবল। ক্ষুদ্র সংকীর্ণ নানা স্বার্থ কেবলই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, কপটতা কৃত্রিমতার বিকাশে বাতাস ভারি হয়ে যায়। উৎসব এই সব ক্ষুদ্র স্বার্থে সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে সবার সাথে এক হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। চিন্তার জড়তা বুদ্ধির আড়ষ্টতা তার স্বপ্নের দৈন্যতা ঘুচিয়ে তবে উৎসবের আঙিনায় প্রবেশ করা যায় উৎসবকে ঘিরেই সুযোগ ঘটে এসব অচলায়তন ভাঙার। এই বৈশাখে নতুন বরণের উদ্যাপন হোক প্রাণের উল্লাসে। বৈশাখী মেলা যেন প্রাণের মেলা দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার উপস্থিতি হয়ে উঠে আনন্দঘন এক সমাবেশ। এটি আমাদের জীবনের অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। পহেলা বৈশাখের সাথে মেলার রয়েছে সুনিবিড় সম্পর্ক। ঐতিহ্য হিসেবে এ এলাকার মানুষের কাছে পরিগণিত হয় নববর্ষের সমস্ত আনন্দ যেন মেলা পার্বনকে ঘিরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে কোথাও তিলধারণের ঠাই থাকে না এ মেলা সম্প্রীতির এ মেলার সুন্দরের।
বাংলা নববর্ষ হল বাঙালি জাতির নতুন দিনের উৎসব এবং এই নববর্ষে প্রত্যেক বাঙালি দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। নববর্ষ হচ্ছে অভিন্ন চেতনার উৎসব আমাদের এক হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি লালন পালনের শিক্ষা দেয়। আনন্দ মনে থাকলেও অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তা প্রকাশ করা যায় না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। জীবনের জন্য সব কিছু বাঁচার তাগিদে এগিয়ে যেতে হয়। সুখ শান্তি খোঁজে আমরা ক্রমাগত ছুঁটে চলেছি। নববর্ষ নতুন সেতু বন্ধন রচনা করে আমাদের পথ চলাকে সুন্দর করে তোলে। পুরনো সব ভুলে নতুনের জয়গান এখন সবার মুখে মুখে। আমাদের প্রতিটি দিন হোক নববর্ষের দিনের মত। নববর্ষের আনন্দ ছুঁয়ে যাক সবার হৃদয়। নববর্ষের সব আয়োজন সুন্দরের পক্ষে। শান্তির পক্ষে। জীবনের জন্য দেশের জন্য এমনকি সমাজের জন্য মঙ্গল কামনায়। নববর্ষ সার্বজনীন উৎসব। দল মত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই উৎসবে প্রাণের টানে মিলিত হয়। আমাদের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা উদারতার জয়গানে সাড়া দেবে।
নতুন এই বাংলায় আসুন বাঙালির নববর্ষের উৎসবে মিলিত হই। সমস্যা অনেক আমরা জানি। তবে অনেক সমস্যার বিপরীতে উৎসব একটিই। তাই মিলনেই উৎসবের সার্থকতা। সমস্যার আবিলতাকে পিছনে ফেলে বৃহৎ ও মহৎ প্রণোদনায় জেগে উঠি। সংসারে বাইরে বৃহৎ পৃথিবী ও মহৎ জীবনের আস্বাদ লাভ করি। বাংলা নববর্ষ বাঙালির উৎসবের দিন। এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিন। আজ নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ দিনকে নতুন করে ভেবেছি। কিভাবে বাঙালির নববর্ষের চেতনাকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এদেশের মানুষ চিরকাল ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থেকে উৎসব পালন করে চলেছে। এই উৎসব আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। পারস্পরিক বন্ধন সহমর্মিতা এদেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আগামীর পথে।
চট্টগ্রামে ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় দলীয় সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য মুকাভিনয়, যন্ত্রসংগীত, কবিতা পাঠের আসর, বর্ষ বিদায় শোভাযাত্রা চিরায়াত বাংলা গান, পাহাড়ি গান, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, আধ্যাত্মিক সংগীত, লালনগীতি, বাউল, রংপুরের বাওইয়া, ভাটিয়ারী, বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোক সংগীতসহ নানারকম অনুষ্ঠানমালা ছিল বর্ষ বিদায় বর্ষবরণে। সবার সহযোগিতায় এ মেলা হয়ে উঠে আনন্দময়।
নববর্ষের অঙ্গীকার হোক সূখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। নতুন আলোর দিগন্তে আমাদের সম্ভাবনা পৌঁছে যাক একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। বাংলা নববর্ষ আবহমান বাংলার প্রাণের উৎসব। আসুন আমরা মিলিত হই উৎসবের আনন্দে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন একটি বছর শুরু হলো, নতুনের জয় গান আর নতুন চিন্তা-চেতনায়। নববর্ষের অঙ্গীকার হোক ব্যক্তি গোষ্ঠী দল কিংবা কাউকে খুশি করা, আঘাত নয়, কাউকে আঘাত করা নয় আমাদের মূলমন্ত্র হোক সুন্দর বাংলাদেশ। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সুখ, শান্তি আর আনন্দে ভালো ভালোই কাটুক, এই প্রত্যাশা করি। রঙিন বৈশাখে রঙিন হয়ে উঠুক আমাদের সবার জীবন।
লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন