শারমিন রিমা: ২১ আশ্বিন, মহালয়ার দিনক্ষণ শুরু। শরতের মিঠেল রোদ, আকাশে পেঁজা তুলো, শুভ্র শিউলির ভোরের উঠোনে ঝরে পরা শিশির আর নদীর ধারে মাঠে মাঠে কাশের সমারোহ- সবকিছু জানান দিচ্ছে ‘দেবী মা’ আসছেন। থেমে থেমে শরতের আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামলে যেন আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে একটা পুজো পুজো গন্ধ। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির পূজা তো সেইদিন থেকে শুরু হয়, যেদিন থেকে শুরু হয় পুজোর জন্য অপেক্ষা। বুধবার (৬ অক্টোবর) দিনের শুরুতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। দেবী মায়ের আগমনে ঢাক আর শঙ্খ ধ্বনির তালে মেতে উঠার অপেক্ষা যেন শেষের পথে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের। পূজার ঘন্টা ধ্বনি কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালিদের দরজায়।
হিন্দু পুরাণ মতে, আশ্বিন মাসের শুক্লাপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষে বাসন্তি দুর্গাপূজার সময় গণনা করা হতো। আগেকার সময়ে বসন্তকালে জলবসন্ত রোগের প্রকোপ দেখা দিলে রোগ-শোক, অভাব দেখা দিত। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। ফলে তখন থেকেই বাসন্তী পুজো অপেক্ষা শরৎকালের দুর্গোৎসব কালক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।আর সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজা প্রচলন হয়ে যায়। দেবী দুর্গার বাহন সিংহ, কিন্তু পঞ্জিকা মেনে মর্ত্যে আগমন ও বিদায়ের জন্য প্রতিবার পৃথক পৃথক বাহন বেছে নেন দুর্গা। কখনও ঘোড়া, কখনও হাতি, আবার কখনও দোলা বা নৌকায় আসা যাওয়ার পর্ব সারেন দেবী। এবার দেবী দুর্গা ঘোটকে (ঘোড়ায়) মর্ত্যলোকে আসবেন এবং দোলায় (নৌকা) চড়ে কৈলাশ পর্বতে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন। তাই প্রতিমার গায়ে তুলির শেষ আচঁড় এঁকে দিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা।
বুধবার ৬ অক্টোবর থেকে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজার দিনক্ষণ শুরু। এ সময় হবে বিশেষ পূজা। এরপর ১০ অক্টোবর গোধূলিলগ্নে দেবীর বোধন, ১১ অক্টোবর সকালে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে শুরু হবে মূল আয়োজন। এদিন গোধূলিলগ্নে দেবীর আগমন ঘটবে। ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে, এছাড়া দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনও করা হবে। এদিন দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। মহাষ্টমীতে হয় কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা, দুপুরে সন্ধিপূজা এবং বিকালে মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে। ১৪ অক্টোবর মহানবমী।নবমীতে সকাল থেকে পূজা চলবে, সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা হবে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন। বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকেই পূজা হবে এবং বিকালে হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হবে এই শারদীয় দুর্গোৎসব।
গত বছর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে দুর্গাপূজা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেই বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল করা হচ্ছে। মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির কর্মকর্তারা বলছেন, এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করা হবে। সারাদেশে এবার ৩২ হাজার ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৩৮টি মণ্ডপে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৭৬টি মণ্ডপে এবং জেলায় ১ হাজার ৯৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দল কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন