আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কখনো কোনো ‘শুভ’ কাজ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (৩০ মে) সকালে শেরেবাংলা নগরে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ এই দেশের জন্য কখনো কোনো শুভ কাজ করেনি। এই দেশকে নির্মাণের জন্য তারা কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি। তারা শুধু ধ্বংসই করেছে।’
‘আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু করেছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে এই দেশের উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে বন্ধ করে দিচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদের জন্ম দিচ্ছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি লড়াই করছে। শুধু বিএনপি নয়, আজকে গোটা জাতি ভুক্তভোগী। কারণ, আমাদের গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে, আমাদের মুক্ত সমাজ ব্যবস্থাকে হরণ করা হয়েছে, মুক্ত সাংবাদিকতাকে হরণ করা হয়েছে এবং একটা নির্যাতনমূলক, নির্বতনমূলক শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এইখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রমান একজন ক্ষণজন্মা নেতা এবং জাতির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তিনি সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, সত্যিকার অর্থেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে তিনি সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছেন। নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে তিনি (জিয়াউর রহমান) এ জাতিকে মুক্ত করেছিলেন, কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কটি আবদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত করেছিলেন, জাতির মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছিলেন। একটি বিভক্ত জাতিকে তিনি একত্রিত করেছিলেন, ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, একটা বিপ্লব শুরু করেছিলেন নতুন বাংলাদেশের জন্য, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন এবং উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।’
‘আমরা আজকের এই দিনে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। সেই সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী, যিনি দীর্ঘকাল শহীদ জিয়ার রেখে যাওয়া পতাকাকে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দর্শনের পতাকাকে ধারণ করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে বেরিয়েছেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদেরকে। স্মরণ করছি এই দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জাতাকলের নির্যাতনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদেরকে। আজকের এই শাহাদাৎ বার্ষিকীর দিনে গোটা জাতির কাছে আমাদের আহ্বান- আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার আকাঙক্ষা নিয়ে আমরা যে লড়াই করেছিলাম, যুদ্ধ করেছিলাম, সেই আকাঙক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আমরা আবার লড়াই শুরু করি, সংগ্রাম শুরু করি। আসুন, আমরা আজকে গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করি, গণতন্ত্রকে মুক্ত করি।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া কমন আছেন, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবার জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের চিকিৎসকেরা অত্যন্ত পরিশ্রম করে তার চিকিৎসা করছেন। তাদের সুচিকিৎসার কারণে তার জ্বরটা নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে এবং তারা আশাবাদী হয়েছে এই জ্বর হয়তো আর আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুঃখ হয়- যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন আজীবন, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর কারানির্যতন ভোগ করেছেন, তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয় না। বার বার করে বলা হয়েছে তার এডভানস্ড চিকিৎসা দেওয়া দরকার। কিন্তু প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কারণে সেই সুযোগ থেকে সরকার তাকে বিঞ্চত করছে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন