ইফতেখার সৈকত: পর্নো ছবির অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ‘হাশ মানি’ বা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে শাস্তি পেতে চলেছেন সাবেক মার্কন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্টর্মির অভিযোগের তদন্তেই ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছে ম্যানহাটানের একটি গ্রান্ড জুরি। আগামী মঙ্গলবার আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। আর এখন প্রশ্ন উঠছে—দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন কি না?
এসব বিষয়ের উত্তর দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস অ্যাঞ্জেলেসের আইনের অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাসেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে হলে প্রার্থীদের মাত্র তিনটি জিনিস প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জন্মগত নাগরিক, বয়স ৩৫ এবং ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হয়। তবে সে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী একজন অভিযুক্ত বা দোষীর প্রার্থী হতে কোন বাধা নেই। তবে একজন অপরাধীর পক্ষে জেতা অনেকটা কঠিন।
আরও যে বিধিনিষেধ আছে
অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাসেন বলেন, সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে যিনি দুবার রাষ্ট্রপতি হয়েছেন (অর্থাৎ দুবার নির্বাচিত হয়েছেন বা অন্য কারও মেয়াদের অর্ধেক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তারপরে নিজে জিতেছেন) তিনি আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে এটি ট্রাম্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি হাউস দ্বারা অভিশংসিত (অভিযুক্ত) হয়ে উচ্চ অপরাধ এবং অপকর্মের জন্য সিনেট দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং আবার কাজ করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন হাউস দ্বারা দুইবার অভিশংসিত হয়েছিল তবে সেনেট থেকেও দুইবার খালাস পাওয়ায় তার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোন বাধা নেই।
সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর বরাত দিয়ে রিচার্ড হ্যাসেন বলেন, কোন ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বা সমর্থন করে তবে সে প্রার্থী বা কোন পদে থাকতে পারে না। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কেবলই অর্থ প্রদান সম্পর্কিত যার সাথে বিদ্রোহ বা বিদ্রোহের কোনো সম্পর্ক নেই। অথবা শ্রেণীবদ্ধ নথি সংক্রান্ত সম্ভাব্য ফেডারেল চার্জ না। সুতরাং এক্ষেত্রেও ট্রাম্প বাধামুক্ত।
এদিকে ফুলটন কাউন্টি, জর্জিয়ার সম্ভাব্য অভিযোগ ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বা ফেডারেল স্তরে ৬ জানুয়ারি ২০২১-এর বিষয়ে কেউ কেউ বিদ্রোহের একটি রূপ হিসেবে ধরে নিতে পারে। তবে এটি একটি সময় স্বাপেক্ষ বিষয় যা আদালতের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে।
দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্প কি ভোট দিতে পারেন?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্নো ছবির অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ‘হাশ মানি’ বা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ছাড়াও আরও কয়েকটি অভিযোগ আসা হয়েছে। যদি তিনি নিউইয়র্কে একটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন, তবে ট্রাম্পকে তার হোম স্টেট ফ্লোরিডায় ভোট দিতে বাধা দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্তত যতক্ষণ না তিনি সম্ভাব্য সাজা ভোগ করেন।
ট্রাম্পকে কি কারাগারে নেওয়া হবে
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য মতে, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে জামিনের নতুন নিয়ম অনুসারে ট্রাম্প আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হওয়ার পর জামিন পেতে পারেন।
ট্রাম্প কি বিচারকাজের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেন?
প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার অধিকার রাখেন। কিন্তু, ট্রাম্প আইনজীবীদের হুমকি দিতে পারবেন না।
অন্যদিকে, বিচারকরা ট্রাম্পের মুখ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিতে পারেন। কেন না, ইতোমধ্যে তিনি বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। এমনকি, তাকে অভিযুক্ত করা হলে তিনি ‘ধ্বংসাত্মক’ আন্দোলন শুরুর হুমকিও দিয়েছিলেন।
কতদিন চলতে পারে বিচার কাজ?
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্পের এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চলতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের প্রমাণাদি জড়ো করেছে। সেখানে বিচারকদের কথা ও সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য আছে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের আইনজীবীরা খুব সম্ভবত মামলাটির বিচার শুরুর আগেই আইনগতভাবে তা বাতিলের আবেদনও করতে পারবেন।
অভিযুক্ত হলে ট্রাম্প কি জেল খাটবেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তত্ত্বগতভাবে এর উত্তর, হ্যাঁ। বাণিজ্যিক জালিয়াতি ধরা পড়লে তার ৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
কে এই নারী, যার জন্য এত কাণ্ড
কে এই পর্নো তারকা?নীলছবির অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রাজ্যের ব্যাটন রুজে একটি গরিব এলাকায় বড় হন তিনি।
জানা যায়, ছোটবেলায় ঘোড়ায় চড়তে ও লেখালেখি করতে পছন্দ করতেন স্টেফানি। চাইতেন বড় হয়ে সাংবাদিক হবেন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে ২০০৪ সালে পর্নো ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়েন স্টেফানি। সেখানে পরিচিতি পান স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে। হুইস্কির নামকরা ব্র্যান্ড জ্যাক ড্যানিয়েলস থেকে নিজের নামের শেষাংশ বেছে নিয়েছিলেন তিনি নিজেই।
তবে আত্মজীবনীতে স্টর্মি জানিয়েছেন, এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রথম স্ট্রিপিংয়ের (নগ্ন হওয়া) অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। পরে তিনি অন্যান্য কাজ শুরু করেন। পর্নো ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মূলধারার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার।
২০১০ সালে তিনি লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেট মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা করে রাজনীতিতেও নাম লেখিয়েছিলেন। ২০১১ সালে নিজের আত্মজীবনী ‘ফুল ডিসক্লোজার’ লেখেন তিনি। এটি নিয়েই মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’-এ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ করেন।
স্টর্মির এই সাক্ষাৎকার নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বে। সংবাদমাধ্যমের সামনে স্টর্মি দাবি করেন, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের শুরু হয়েছিল। সেই বছর জুলাই মাসে একটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। এরপরে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার হোটেলে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন বলেও দাবি করেন তিনি।
সাবেক পর্নো তারকার দাবি, এই শারীরিক সম্পর্কের কথা যেন কেউ জানতে না পারে, সে জন্য তাকে প্রবল চাপ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ঘুস দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী।
এই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। তদন্ত করেন ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগ। তারই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্ভবত অভিযুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন