শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ইফতেখার ইসলাম: ” সকালে ফজরের নামাজ পড়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি কাজে। দুপায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে যাত্রীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা পৌঁছে দেই। রোদ, বৃষ্টি কিছুতেই থামবার উপায় নেই। জীবনে ছুটি বলতে ভাড়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষার সময়টাই। তারপরেও যে রোজগার হয় তা সন্ধ্যাবেলা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

মেয়েটি আজকে ১৬ দিন হলো, বলে রেখেছে একজোড়া চুড়ি চায়। কিন্তু গরিবের কি শখ বলতে কিছু থাকে?”- ঠিক এভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে জীবন সংসারে টিকে থাকার লড়াইয়ে বেদনাবিধুর গল্প শুনাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারস্থ রিকশাচালক রফিকুজ্জামান। 

রফিকুজ্জামান নয় দ্রব্যমূল্যের এমন বেসামাল দরের কবলে বিপর্যস্থ দেশের প্রায় সব নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষ। কেউবা অন্যের কাছে বলে সেই যন্ত্রণা ভাগ করছেন। আবার কেউ লোকলজ্জায় নিরবে কপাল চাপড়াচ্ছেন। আর এই সমস্যায় বেশি বিপদে পড়ছেন শহরাঞ্চলের মানুষজন। 

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়ে চড়া মল্যে জিনিসপত্র বিক্রির দৃশ্য। মাছ মুরগির চড়া দামতো রয়েছে তার সাথে শাক সবজিতেও যেন আগুন জ্বলছে। তেলের বাজার যেন আকাশচুম্বী। এছাড়া চাল ডালসহ মুদিদ্রব্যের দামও বেশামাল। 

সরকারি বিপণন সংস্থা (টিসিবির) প্রকাশিত বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী গেলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টির দামই বেড়েছে৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, পেঁয়াজ, মুরগি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, চিনি, ডিম, জিরা ইত্যাদি৷ চার দিন আগে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা৷ রবিবার সেটা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা৷ ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে আট টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ বাজারে এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়৷ কয়েক মাস স্থির থাকার পর আবার বেড়েছে চিনির দাম৷ এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা৷ এখন সেটা ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ ডিমের ডজন এখন ১১০ টাকা৷ এছাড়া শীতের মৌসুমেও সবজির দাম পঞ্চাশের কোটা পেরিয়ে। 

পণ্যের চড়া দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এমনটা হচ্ছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্য পন্য বিক্রি করছি। বাজার মনিটরিং আরো কঠোর করছি। ” 
জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘ তেলের দামের সাথে আন্তর্জাতিক বিষয় জড়িত। তবে আমাদের দেশে তো যথেষ্ট চালের উৎপাদন হয়, তবুও কেন চালের দাম বাড়ছে। এখানে সরকারকে ভুমিকা রাখতে হবে৷ কতিপয় মানুষের কাছে বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে তারা তো মুনাফা করতে চাইবেই৷ পাশাপাশি তেলে দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আর এসব থেকে নিস্তার পেতে টিসিবির সক্ষমতা বাড়িয়ে আরও বেশি পণ্য দিয়ে তাদের মাঠে নামানোর কথাও বলছেন এই অর্থনীতিবিদ৷”

এইদিকে  সম্প্রতি এক মানববন্ধনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের গা দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ কিন্তু সরকার শুধু তার পেটুক বাহিনীর চিন্তা করছে৷ দরিদ্র মানুষের ব্যাথা বুঝতে পারছে না৷”

এইদেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় শুরু হচ্ছে রমজান মাস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান মাসে পন্যের দাম কমানো হলেও বাংলাদেশে হয় এর উল্টো। কিছু অসৎ চক্র তৎপর হয়ে পড়ে দ্রব্যমূলের দাম বাড়াতে। আর এমন পরিস্থিতিতে আর বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমানে পন্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধির পেছনে রমজান একটা বিষয় হতে পারে। তাই সরকারে এই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। না হয় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী নতুন বছরের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন৷ গত জানুয়ারিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ৷ গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ৷

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন