নূরুল খান
ধর্মবিশ্বাস আর বিজ্ঞানের বিশ্বাস এক নয়। তবু এক শ্রেণির কথিত আলেম বিজ্ঞানকে বারবার টেনে আনেন ধর্মবিশ্বাসকে ব্যাখ্যা করার জন্য। ধর্মের সত্যতা—যথা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, বিচার দিবস, জান্নাত–জাহান্নাম ইত্যাদি—যদি প্রমাণ করে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় হতো, তবে এই সব সত্য প্রমাণের জন্য আল্লাহ মানুষকে প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্ত কুরআনেই বর্ণনা করতেন। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ অনেক যুক্তি দিয়েছেন, যা মানুষকে চিন্তাশীল হতে উৎসাহিত করে, কিন্তু সেসব যুক্তি বিজ্ঞানের তথ্য–উপাত্তের মতো নয়। বরং আল্লাহ মানুষকে তাঁর আয়াতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনেরই তাগিদ দিয়েছেন।
“যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর, যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর, যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে—তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।” (সূরা বাকারা: আয়াত ৩–৫)
বিষয়টি সহজেই বোঝা যায় যে আল্লাহ বিশ্বাসের বিষয়গুলোকে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করার কথা বলেছেন। ইউটিউবে সার্চ দিলে জনপ্রিয় এমন অনেক আলেমের বিজ্ঞানবিষয়ক বক্তৃতা দেখা যায়। ধর্ম যুক্তিতর্কের এক বিশ্বাস, আর অন্যদিকে বিজ্ঞানের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয় তথ্য–উপাত্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে। বিজ্ঞানের বিশ্বাস সর্বদাই আপডেট হয় বা পরিবর্তিত হয়। আজকের বিজ্ঞানের যে বিশ্বাসের ভিত্তিতে একজন আলেম ধর্মের সত্যকে ব্যাখ্যা করছেন, সেটিও তো কাল পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। সে সঙ্গে ধর্মের ব্যাখ্যা বা কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যাও ভিন্ন রকম হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর বাণী তো অপরিবর্তনশীল, অক্ষয় ও কালজয়ী।
“সত্য ও ন্যায়ের দিক থেকে আপনার প্রতিপালকের বাক্য পরিপূর্ণ। তাঁর বাক্য পরিবর্তনের সাধ্য কারও নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।” (সূরা আনআম: আয়াত ১১৫)
কাজেই আজকের বিজ্ঞানের কোনো বিশ্বাসের ভিত্তিতে কুররআনের কোনো আয়াতের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার অর্থ পরিবর্তিত হতে বাধ্য। কাজেই কুরআনের কোনো আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝতে সেটি কুরআনেই খুঁজতে হবে। কুরআনে আল্লাহ অনেক জাতির উত্থান–পতনের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। কাউকে কাউকে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়েছেন, আবার কারও কাছ থেকে ক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব কাহিনির মধ্যে নিহিত রয়েছে কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা। এর সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই।
“আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য যাবতীয় দৃষ্টান্ত বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। আর মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্ককারী।” (সূরা আল কাহফ: আয়াত ৫৪)
ধর্মবিশ্বাস ও বিজ্ঞানের বিশ্বাসের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান থাকার পরও আমাদের ইসলামী বক্তারা তাদের ওয়াজ–নসিহতে কখনো দর্শন, কখনো মহাকাশবিদ্যার জ্ঞান ব্যাখ্যা করে প্রথমে নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। তারপর ইসলামের সঙ্গে বিজ্ঞানের একটা সম্পর্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। তাদের ধারণা, যেহেতু মানুষ বিজ্ঞানের সত্যকে সহজে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, তাই বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে মানুষ সহজেই ধর্মের সত্যকে মেনে নেবে। তাদের এই চেষ্টা অনেকটা জোরজবরদস্তির মতো, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন