প্রায় ২৫ হাজার রকমের ওষুধ তৈরি হয় দেশে। এর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে সরকারের। ফলে বিপুল পরিমাণ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে।
আসল-নকল ওষুধ চেনার জন্য কিছু উপায় রয়েছে। পণ্যের প্যাকেজিং, লোগো, বারকোড, এবং সিলগুলো ভালোভাবে দেখে নিন। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, ওয়েবসাইটে গিয়ে সিরিয়াল নম্বর মিলিয়ে নিতে পারেন।
ভেজাল বা নকল ওষুধ শনাক্তে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। একজন নাগরিক যখন ওষুধ কিনতে যান তখন তিনি খুব সহজেই সেটি যাচাই করে নিতে পারেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পণ্য যাচাই-বাছাই করা ভোক্তার অধিকার। কেউ যাচাই-বাছাইয়ে বাধা দিলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে।
মেডিকেল স্টোরে পাওয়া প্রতিটি ওষুধ আসল কি-না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। নকল ওষুধ খেলে সেরে ওঠার পরিবর্তে নিজেদের আরও অসুস্থ করে তোলে রোগীরা। ওষুধের প্যাকেজিং দেখে মানুষ প্রায়শই প্রতারিত হয়। কারণ আজকাল নকল ওষুধও হুবহু আসল ওষুধের মতো দেখতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে আসল এবং নকল ওষুধ সনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

নকল ওষুধ চেনার উপায় নিচে দেওয়া হলো
প্যাকেজিং, তারিখ
নকল ও আসল ওষুধ সনাক্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল প্যাকেজিং মনোযোগ সহকারে দেখা। আসল ওষুধের প্যাকেজিং নিখুঁত অবস্থায় ও ব্র্যান্ডের লোগো সহ আসে। কিন্তু নকল ওষুধের প্যাকেজিংয়ের প্রিন্ট হালকা বা ঝাপসা হতে পারে। ব্র্যান্ডের লোগোটি দেখতে একটু অদ্ভুত বা বাঁকা লাগতে পারে। আসল ওষুধের গায়ে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, ব্যাচ নম্বর এবং এমআরপি স্পষ্টভাবে লেখা থাকে।
কিউআর কোড
আসল ওষুধের গায়ে একটি হলোগ্রাম বা কিউআর কোড থাকে, যা স্ক্যান করে ওষুধের সত্যতা জানা যায়। এ জন্য আপনাকে আপনার মোবাইলের স্ক্যানার খুলে ওষুধে উপস্থিত কিউআর কোডটি স্ক্যান করতে হবে। এটি স্ক্যান করার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের সঙ্গে সম্পর্কিত মূল কোম্পানির নাম, উৎপাদনের তারিখ, ব্যাচ নম্বর এবং অন্যান্য বিবরণ আপনার ফোনে দেখতে পাবেন।
যদি স্ক্যান করার সময় কোনো তথ্য প্রদর্শিত না হয় বা ভুল বিবরণ প্রদর্শিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে ওষুধটি নকল। আসল ওষুধের কিউআর কোড সর্বদা অ্যক্টিভ থাকে ও তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য দেখিয়ে দেয়। যারা নকল ওষুধ তৈরি করেন, তারা হয় কিউআর কোড অ্যাড করেন না অথবা স্ক্যান করার সময় এটি কাজ করে না।
ওষুধের রং, আকার
ওষুধ কেনার পর বাড়িতে গিয়ে যখন সেটি খাবেন বা ব্যবহার করবেন তখন খেয়াল করুন, ওষুধের রং, আকার, গঠন নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে কিনা। ওষুধের কোথাও কোনো ভাঙা অংশ রয়েছে কি না, গুঁড়ো ওষুধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে দেয়া আছে কি না এসব ভাল করে দেখুন। সন্দেহ হলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
ওষুধ শক্তি বা নরম কিনা
ওষুধটি যদি ক্রিস্টালের মতো হয় তাহলে আগের কেনা ওষুধের মতো শক্তি বা নরম কিনা দেখুন। ওষুধের ভেতরে কোথাও ফোলা অংশ বা দাগ থাকলে সেই ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে।
ওষুধের দাম কম বা বেশি
ওষুধের দাম আপনার কাছে অসম্ভব কম বা বেশি হলে সেটি সন্দেহের একটি কারণ। নকল বা ভেজাল ওষুধ আসল ওষুধ থেকে কম দামে বিক্রি হতে পারে। এমন সন্দেহ হলে সেই দোকান থেকে ওষুধ না কেনাই ভাল।
নকল-মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেলে কী হয়?
অনেক সময় অসাবধানতাবশত বা ভুলবশত আমরা মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সেবন করে ফেলি। এমন পরিস্থিতিতে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, এটি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে? আদৌ কি এর কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, নাকি বিষয়টি তেমন উদ্বেগের নয়? এই প্রশ্নটি প্রায়শই আমাদের মনে আসে, বিশেষ করে যখন আমরা পুরনো ওষুধের বাক্স ঘাঁটতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ওষুধ খুঁজে পাই।
এই প্রতিবেদনে আমরা মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সেবনের সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং এর ফলে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত প্রস্তুতকারক কোম্পানির পক্ষ থেকে ওষুধের মেয়াদ প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সেই ওষুধের কার্যক্ষমতা সময়ের সঙ্গে কমতে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে ওষুধটি বিষে পরিণত হয়। বিশেষ করে অজান্তে মেয়াদ উত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক, হার্টের ওষুধ বা ইনসুলিন কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়।

কী করা উচিত
বাড়িতে নিয়মিত ওষুধের মেয়াদ দেখা নেওয়া উচিত। কোনও ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, তা তখনই ফেলে দেওয়া উচিত। তাতে পরবর্তী সময়ে তা ভুলবশত খেয়ে ফেলার আশঙ্কা কমবে। তরল ওষুধ সাধারণত দ্রুত নষ্ট হয়। তাই বাড়িতে স্যাঁতসেঁতে কোনও জায়গায় তরল ওষুধ রাখা উচিত নয়। কোনও ওষুধ নিয়ে মনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হলে, সব সময়েই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
নকল ওষুধ চেনার আরও ৭ উপায়
দেশে বছরে প্রায় ২৫ হাজার রকমের ওষুধ তৈরি হয়। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে সরকারের। ফলে বিপুল পরিমাণ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিএইচও) এর তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলির বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল।

দেশে সরকারি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণের। ২০১৫ সালে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের দায়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১২৩৫টি মামলা করেছে এবং ৬৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৬ সালের প্রথম দুই মাসে এ সংক্রান্ত ২৫০টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ৬জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং একটি ফার্মেসি সিলগালা করে দেয়।
ভেজাল বা নকল ওষুধ শনাক্তে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। একজন নাগরিক যখন ওষুধ কিনতে যান তখন তিনি খুব সহজেই সেটি যাচাই করে নিতে পারেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পণ্য যাচাই-বাছাই করা ভোক্তার অধিকার। কেউ যাচাই-বাছাইয়ে বাধা দিলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে।
১. ওষুধের প্যাকেটের গায়ে যে সিল থাকে সেটি ভাল করে দেখুন। কোথাও কোনো গলদ আছে কিনা। প্রয়োজনে একই কোম্পানির অন্য একটি ওষুধের প্যাকেট হাতে নিয়ে দুই প্যাকেটের সিল মিলিয়ে দেখুন। দু’টির সিল ও অন্যান্য লেবেল একই আছে কিনা। একরকম না হলে অন্য দোকান থেকে ওষুধ কিনুন।
২. আগে যদি আপনি একই ওষুধ কিনে থাকে তাহলে পরের বার কেনার সময় আগের প্যাকেটের সঙ্গে প্যাকেজিং, অক্ষরের ফন্ট, বানান, রং এগুলো মিলিয়ে দেখুন। কোথাও কোনো গলদ মনে হলে সেখান থেকে ওষুধ কেনা এড়িয়ে চলুন।
৩.ওষুধ কেনার পর বাড়িতে গিয়ে যখন সেটি খাবেন বা ব্যবহার করবেন তখন খেয়াল করুন, ওষুধের রং, আকার, গঠন নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে কিনা। ওষুধের কোথাও কোনো ভাঙা অংশ রয়েছে কি না, গুঁড়ো ওষুধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে দেয়া আছে কি না এসব ভাল করে দেখুন। সন্দেহ হলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
৪. ওষুধটি যদি ক্রিস্টালের মতো হয় তাহলে আগের কেনা ওষুধের মতো শক্তি বা নরম কিনা দেখুন। ওষুধের ভেতরে কোথাও ফোলা অংশ বা দাগ থাকলে সেই ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. ওষুধের দাম আপনার কাছে অসম্ভব কম বা বেশি হলে সেটি সন্দেহের একটি কারণ। নকল বা ভেজাল ওষুধ আসল ওষুধ থেকে কম দামে বিক্রি হতে পারে। এমন সন্দেহ হলে সেই দোকান থেকে ওষুধ না কেনাই ভাল।
৬. দেশে প্যানাসিয়া ডট লাইভ (www.panacea.live) নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে গিয়ে আপনি আপনার ওষুধটি যাচাই করতে পারবেন।

৭. প্যানাসিয়ার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ওষুধের প্রতিটি পাতায় একটি করে আলাদা কোড থাকে। কেনার আগে ওষুধের গায়ে থাকা নির্দিষ্ট কোডটি ‘২৭৭৭’ নম্বরে এসএমএস করে পাঠালে প্যানাসিয়ার ডাটাবেইসে থাকা কোডের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাই হবে। আর তাত্ক্ষণিকভাবে একটি ফিরতি এসএমএসে (ইংরেজি ও বাংলায়) জানিয়ে দেওয়া হবে ওষুধটি আসল না নকল।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন