শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নানা আয়োজনে চসিকের ১৯ দিনের বইমেলা শুরু

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২২

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটির এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা ২০২২। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জাতীয় পতাকা, চসিকের পতাকা উত্তোলনসহ বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ উৎসব বাঙালি জাতিসত্ত্বা দাঁড় করাতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার জায়গা নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বইয়ের বিকল্প বই, এটি এমন একটি মাধ্যম; যা আমাদের মনকে বিকাশিত করে, জ্ঞান সমৃদ্ধ আর হৃদয়ের পরিতৃপ্তিকে করে পরিপূর্ণ। সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের চিন্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম বই; যা আলোকিত মানুষ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্যতম অনুসঙ্গ।’

একুশে ফেব্রুয়ারী স্মরণে মেয়র বলেন, ‘৫২র ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অত্যন্ত বিরাট। এর ধারাবাহিকতায় ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালীর নিরঙ্কুশ বিজয়, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ অভ্যুথান, ৭০’র নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় ও সর্বশেষ ৭১’রে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ভাষা আন্দোলনকে পুঁজি করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি লাভ করার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। এসব প্রেক্ষাপটের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ জন্য ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাথা এক অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস।’

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম মাসুম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, দুর্বার বাংলার নির্বাহী সম্পাদক মাসুম চৌধুরী।

উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, নাজমুল হক ডিউক, মো. মোর্শেদ আলী, মো. সলিম উল্লাহ বাচ্চু, মো. জাবেদ, গোলাম মো. জোবায়ের, গাজী মো. শফিউল আজিম, আতাউল্লাহ চৌধুরী, জহর লাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, মো. ইসমাইল, মো. ইলিয়াছ, মো. নুরুল আমিন, মো. আব্দুল মান্নান, ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, নুরুল আলম, শৈবাল দাশ সুমন, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নুরজাহান, আঞ্জুমান আরা, শাহীন আকতার রোজী, হুরে আরা বেগম, নিলু নাগ, রুমকী সেনগুপ্ত, জাহেদা বেগম পপি, ফেরদৌসি আকবর, লুৎফুন্নেচ্ছা দোভাষ বেবী, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস।

মেয়র রেজাউল করিম একুশে বইমেলা চট্টগ্রামে আয়োজনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রামসহ অনেক বীরগাথা ইতিহাস সৃষ্টিতে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। এমনকি ভাষা আন্দোলনে প্রথম প্রতিবাদী কবিতা রচিত হয় চট্টগ্রামের কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরীর কলমে। বলাবাহুল্য, পূর্ববাংলায় প্রথম সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন হয়েছিল চট্টগ্রামের হরিখোলা মাঠে (বর্তমানে মোমিন রোডস্থ মৈত্রী ভবন) এবং এতে সভাপতিত্ব করেছিলেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। অনুষ্ঠানটিতে দুই বাংলার অনেক খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিকের পদাচারণা হয়েছিল।’

তিনি বই প্রেমীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বই মানুষের পরম বন্ধু। মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসভা। বই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে তৈরি করে সেতুবন্ধন। বই সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে মানুষকে বিশুদ্ধ করে তুলে। মানুষ জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণের জন্য বইমেলা ছুটে যায়। বইমেলার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বই পড়ায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলা। গত দুই বছর প্রস্তুতি থাকা স্বত্বেও মহামারি করোনার কারণে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হয় নি। এ বছর সংক্রমণ হার কম থাকায় এবং প্রকাশক, সংস্কৃতি সেবী, ছাত্র-ছাত্রী, বই প্রেমীদের দীর্ঘ দিনের অবরুদ্ধতার অবসান ঘটানো লক্ষে ও মানসিক স্থবিরতা দূরীকরণে চসিকের উদ্যোগে সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের সহযোগিতায় বইমেলা আয়োজন করা হয়েছে।’

শত প্রাণের উদ্দীপ্ত স্মরণে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে তিনি আহ্বান জানান। ১৯ দিন ব্যাপী এ মেলায় থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, পেশাজীবী সমাবেশ, ছড়া উৎসব, চাঁটগা উৎসব, মরমী উৎসব, কবিতা উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বির্তক প্রতিযোগিতা এসব বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের খ্যাতিমান শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেবেন।

অনুষ্ঠানে দুর্বার বাংলা সাপ্তাহিকের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরান তেলাওয়াত করেন চসিক মাদ্রাসা পরিদর্শক মওলানা হারুনুর রশীদ চৌধুরী। আলোচনা সভা শেষে মেলা পরিষদের আয়োজনে বণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন