শুক্রবার, ০১ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

নামাজে একাধিকবার মোবাইল বেজে উঠলে যা করবেন

শুক্রবার, জুলাই ২৫, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মাওলানা রহমত উল্লাহ: নামাজে মোবাইল ফোন বেজে উঠা এখন এক পরিচিত বিড়ম্বনা। অনেক সময় দেখা যায়—নামাজরত অবস্থায় পকেট বা পাশে রাখা ফোনটি বেজে উঠছে বারবার। এতে নিজের মনোযোগ যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনি আশপাশের মুসল্লিরাও পড়ে যান অস্বস্তিতে। তখন অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান—মোবাইল বন্ধ করা যাবে কি না? বারবার বেজে উঠলে কী করা উচিত?

এই বিষয়ে ইসলামী শরিয়ত ও ফিকাহবিদদের মতামত বেশ পরিষ্কার। তারা বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যতবার মোবাইল বন্ধ করা যাবে

ফিকাহবিদেরা বলেন, নামাজের মধ্যে কেউ যদি মোবাইল ফোন বন্ধ করতে চান, তবে তা এক হাতে সর্বোচ্চ দুইবার পর্যন্ত বন্ধ করা যেতে পারে। তবে এর একটি শর্ত রয়েছে—এই কাজটি করতে হবে এমন সময়ে, যতটুকু সময়ে নামাজে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” বা “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” তিনবার বলা যায়। এই সময়সীমার ভেতরে এক হাতে দুইবার মোবাইল রিং বন্ধ করা বৈধ।

তবে যদি দ্বিতীয়বার বন্ধ করার পর কিছুটা সময় পার হয়—যেমন তিন তাসবিহ পরিমাণ বিলম্বে মোবাইল আবার বেজে ওঠে, তখন তা আবার বন্ধ করা যাবে। এই সময়কার বন্ধ করাকে নতুন কর্ম হিসেবে গণ্য করা হবে।

যদি কেউ একনাগাড়ে তিনবার মোবাইল বন্ধ করতে যান— যদি তা এক হাত দিয়েও করেন—তবে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। তাই এমন পরিস্থিতিতে মোবাইল ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

নামাজ ভেঙে ফেলা যায় যেসব কারণে

শরিয়তের দৃষ্টিতে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে নামাজ ভাঙা বৈধ বা আবশ্যক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

মা–বাবার ডাক: যদি নামাজরত অবস্থায় মা বা বাবা ডাকেন এবং তা অগ্রাহ্য করা তাদের কষ্ট দেওয়ার শামিল হয়, তবে নামাজ ভেঙে সাড়া দেওয়া জায়েজ। (সহিহ বুখারি)

জরুরি বিপদ: যদি দেখেন কেউ অন্ধ কূপের দিকে যাচ্ছে, পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তবে তাকে রক্ষা করতে নামাজ ভাঙা বৈধ।
(তিরমিজি)

চুরি ঠেকানো: কেউ যদি দেখেন, এক দিরহামের সমপরিমাণ সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছে, নিজের হোক বা অন্যের—তখন তা ঠেকাতে নামাজ ভেঙে ফেলা যাবে। (সহিহ বুখারি)

জুলুম রোধ: কোনো নির্যাতিত ব্যক্তি সাহায্য চাইলেও যদি নামাজরত ব্যক্তি নিশ্চিত হন যে তিনি রক্ষা করতে পারবেন, তবে এগিয়ে যাওয়াই কর্তব্য। (তিরমিজি)

-মোবাইল ব্যবহারে করণীয়:

নামাজের আগে মোবাইল সাইলেন্ট বা এয়ারপ্লেন মোডে রাখা উচিত।
মসজিদে প্রবেশের সময় সতর্ক হয়ে ফোন চেক করে নেওয়া উত্তম।
প্রয়োজনে ফোন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখাই সবচেয়ে ভালো।

পরিশেষে বলা যায়, নামাজ ইমানদারের জন্য আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোনো প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা যেন তা নষ্ট না করে দেয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা সবার দায়িত্ব।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন