চট্টগ্রাম: বর্ষার আগে সিটির নালা-খাল পরিস্কারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চলমান প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে চসিক ও সিডিএ আয়োজিত বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালের সমন্বয় সভায় মেয়র এ দাবি করেন।
চসিকের টাইগারপাসস্থ কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এ সভায় সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. মোবারক আলী, মো. ইসমাইল, আবদুল মান্নান, সালেহ আহমদ চৌধুরী, জিয়াউল হক সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. মোর্শেদ আলম, মো. কাজী নুরুল আমিন, পুলক খাস্তগীর, আবদুস সালাম মাসুম, আবুল হাসনাত বেলাল, এম আশরাফুল আলম, মো. নুরুল আলম, নুরুল হক, মো. নুরুল আমিন ও ওয়াসিম উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজের কিছু সিডিএ ও কিছু করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৩৪ বিগ্রেড। এ প্রকল্পের অধীনে সিটির ওয়ার্ডগুলোতে বেশ কিছু ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ড্রেনের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে চসিকের কোন বরাদ্দ নেই। বর্তমানে করপোরেশনের ফাণ্ডের অবস্থাও তত ভাল না। এ পরিস্থিতিতে নালা-খাল মেইনটিন্যান্সের দায়িত্ব করপোরেশনের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ করপোরেশনে ফান্ড ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘যদি সিডিএ নালা-খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে কোন বরাদ্দ দিতে না পারে, সে ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’
সিডিএর চেয়াম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবারের জলাবদ্ধতা অন্যান্য বারের মত হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের চলমান চার বছরের কাজের মধ্যে এখনো দুই বছরের কাজ বাকি। এখনই শতভাগ ফলাফল পাব এটা মনে হয় না।’ তিনি সিটির জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতাভূক্ত আট দশমিক ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথক সাতটি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়া এলাকার কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রকল্প পরিচালকের কাছে তুলে ধরেন। তাদের বেশির ভাগের বক্তব্য ছিল বর্ষার আগে খালের মাটি ও বাঁধ অপসারণ, নালার স্ল্যাপ ঠিক করা ও প্রকল্পের কাজের সাথে কাউন্সিলরদের সমন্বয় করা ইত্যাদি।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহ আলী বলেন, ‘আসন্ন বর্ষার আগে অর্থাৎ, চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারব। আমরা সিটির বিভিন্ন এলাকায় খালগুলোতে ১৭৬ কিলো মিটারের মত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে এটা বড় অগ্রগতি বলা যায়। পাশাপাশি অনেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও চালাতে হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সমানতালে করা সময় সাপেক্ষ। কারণ এখানে বহু প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে এ বছর সিটির প্রবর্তক মোড়ে প্রতি বারের মত জলাবদ্ধতা হবে না বলে আশা করা যায়। কারণ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অপসারণসহ এর পিছনের খালের অবৈধ স্থাপনা সরানো হচ্ছে।’
শাহ আলী সিটির পাঁচলাইশ, কাপাসগোলা ও কাতালগঞ্জ এলকায় খালের সম্প্রসারণ করা যায়নি বলে এখনো ওই এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে বলে উল্লেখ কনে। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজের নীচ দিয়ে ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সংযোগ লাইনের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘সংযোগ লাইনের সাথে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা আটকে গিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হয়।’ উদহারণ স্বরূপ তিনি কাপাসগোলা ব্রিজের কথা উল্লেখ করেন।
শাহ আলী বলেন, ‘সিটির পানি খালে নিতে হলে ড্রেন নির্মাণ করা লাগবে। যে কাজ আমরা ইতিমধ্যে শেষ করেছি। এসব ড্রেন স্ল্যাপ বা ঢালু করে তৈরি করা হয়েছে। যাতে পনি সহজে খালে পৌঁছাতে পারে। আমরা মোট ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছি। রিটাইনিং খালের নির্মণ কাজও এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। যে সাতটি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে, তা বুঝে নিতে ইতিমধ্যে সিডিএকে পত্র দিয়ে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে আমাদের কাজ হল অবকাঠামোগত কাজ শেষে বুঝিয়ে দেয়া। রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো করবে।’
তিনি জুনের মধ্যে ১৮টি খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ কাজে করপোরেশনের কাছ থেকে তার চলমান কাজের সহায়তায় হুইল হল এস্টেভেটর দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
মেয়র এ ব্যাপারে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। শাহ আলী জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ২৩ খালের স্লুইচ গেইট নির্মাণ ও ১২টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন না হওয়াকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা লাগবে। তবে মে মাসের মধ্যে পাম্প বসানের কাজ সম্পন্ন হবে। এ জন্য প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল কিছুটা দৃশ্যমান হবে। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন