সিএন প্রতিবেদন: নিউইয়র্ক শহরের গণ্ডি পেরিয়ে লং আইল্যান্ডের নাসাউ আর সাফোক কাউন্টিতে অভিবাসন নিয়ে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসন নীতির ধারাবাহিকতায় এখানকার প্রশাসন স্পষ্ট করে বলেছে—তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট, সংক্ষেপে আইসিই’র পাশে আছে।
নাসাউ কাউন্টির পুলিশ কমিশনার প্যাট্রিক রাইডার এক কথায় বললেন, “আইসিই’র কাজ আছে। আমরা তাদের সেই কাজ করতে সহায়তা করব। যেমনটা ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট (ডিইএ) বা এফবিআই’র সঙ্গেও করি।”
শান্তভাবে তিনি আরও যোগ করলেন, “স্কুল, হাসপাতাল কিংবা উপাসনালয়ে অভিযান হবে না। কেউ যদি অপরাধের শিকার হন বা কোনোকিছু দেখেন, তাঁর অভিবাসন পরিস্থিতি জানতে চাইব না।”
সাফোক কাউন্টির অবস্থানও একই। যদিও এই কাউন্টিই আদালতে হেরে সম্প্রতি বড় ধরনের আর্থিক জরিমানা গুণতে বসেছে। অভিযোগ—২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, কাউন্টির জেলগুলো আইসিই’র অনুরোধে শত শত অভিবাসীকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছিল। আদালত বলেছে, কাউন্টিটিকে ৬০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
লং আইল্যান্ডের উত্তপ্ত এ বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক শহরজুড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে অনেকেই রাস্তায় নেমেছেন। গত সপ্তাহে ম্যানহাটনের বুকে ‘নো কিংস’ স্লোগানে বিক্ষোভ হয়েছে।
বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনা। ব্রেন্টউডের ২৩ বছরের যুবক এলজন লেমাস। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে সাময়িকভাবে আটক করে আইসিই। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু লেমাসের সেই মুহূর্তটির ভয় আর লং আইল্যান্ডের বাতাসে এখনো ভাসে।
স্থানীয় মানুষজন বলছেন, “এটাই তো ভয়। কখন কে, কোথায়, কার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, কে জানে?”
নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস ইতোমধ্যে নাসাউ কাউন্টির আইসিইর সঙ্গে চুক্তির বৈধতা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। কিন্তু কাউন্টি নির্বাহী ব্রুস ব্ল্যাকম্যান তার যুক্তি স্পষ্ট করে দিলেন, “আমরা চাই না জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় হোক এমন অপরাধীদের জন্য, যাদের এখান থেকে আইসিই সরিয়ে দিতে পারে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে—এই তৎপরতা নিরীহ পরিবারগুলোকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলছে। ডেমোক্র্যাট কাউন্টি আইনপ্রণেতা ডেবরা মুলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “নিরাপদ সমাজ চাই—এ কথা ঠিক। কিন্তু আইসিই’র অভিযানে তো নিরপরাধ অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা কি আমরা চাই?”
সবশেষে, পুলিশ কমিশনার প্যাট্রিক রাইডার বললেন, “আমরা শুধু সঠিক কাজটাই করছি। এতে কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নেই।”
এরপরও প্রশ্ন থেকেই যায়—‘সঠিক কাজ’ কার জন্য? নিরাপত্তা, নাকি মানবতা? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে অভিবাসীদের মধ্যে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন