নিজস্ব প্রতিবেদক: অ্যাওয়ার্ড বা সন্মাননা—বড় দোকানে তৈরি কেবলই কোন কারুকাজ নয়। এটি মর্যাদার প্রতীক, কাজের স্বীকৃতি। অ্যাওয়ার্ড বা সন্মাননা মানুষকে সন্মানিত করে, অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু আজকাল অ্যাওয়ার্ড বা সন্মাননা নিয়ে রীতিমতো চলছে ব্যবসা। সামাজিক প্রতিষ্ঠান, নামে বেনামে অনলাইন ভিত্তিক প্লাটর্ফম, নামধারী ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা কোন সংস্থা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে চলে এসব কার্যক্রম। যেখানে বড় বড় মানুষদের গেস্ট করা হয়। যদিও পরিস্থিতি বুঝে তারাও বিব্রত হন।
আর এসব কার্যক্রম যেন দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে। বছরব্যাপী বিভিন্ন সময় আয়োজন করা হচ্ছে নানান আনন্দ উৎসব। এসব উৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে সন্মাননা স্মরক প্রদানের দিকে। এছাড়া কিছু কিছু অনুষ্ঠান কেবলই অ্যাওয়ার্ড বা সন্মাননাকে ঘিরে হয়ে থাকে। যেখানে দেশি বিদেশি মানুষদের দাওয়াত দিয়ে দেওয়া হয় অ্যাওয়ার্ড বা সন্মাননা। আর এসব মানুষদের মধ্যে কিছু থাকেন খুবই পরিচিত আবার কেউ কেউ একেবারেই ভূঁইফোড়। মূলত নামী দামী মানুষদের সাথে ভূঁইফোড়দের মিশিয়ে করা হয় ব্যবসা।
বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে চলমান নিউইয়র্ক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান কোন সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত নয়। বিভিন্ন বেনামী প্রতিষ্ঠান এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নামে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আর এসব অনুষ্ঠানে ৩৬, ৪০, ৫১ বা ৮০ এরকম করে অসংখ্য মানুষকে ক্রেস্ট প্রদান করে থাকেন।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চালানো হয় প্রচারণা। এরপর নিজেদের পছন্দ মতো মানুষদের বাছাই করে অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করেন। চেনা-অচেনা ব্যক্তি ও সংগঠনকে এসব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ভূইফোঁড় ও অল্প পরিচিতদের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে শীত এবং বসন্তের মৌসুমে সঙ্গীতানুষ্ঠানের নাম করেও এসব আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশ থেকে বিশিষ্ট শিল্পী ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়। আর তাদের ফেসভ্যালু ব্যবহার করে অন্যদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় অর্থ।
অ্যাওয়ার্ডের সাথে ধরিয়ে দেওয়া হয় হাজার ডলারের চালান!
আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে অ্যাওয়ার্ড পেলে ক্রেস্টের সাথে একটি প্রাইজমানি দেওয়া হয়। কিন্তু নিউইয়র্কের এসব প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইজমানির পরিবর্তে ধরিয়ে দেন চালান। যেখানে মোটা অঙ্কের একটা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের।
জানা গেছে, সাম্প্রতি এমন একটি প্রতিষ্ঠান ৪০ জন বিশিষ্টজনকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনের পর প্রত্যেককে দেওয়া হয় অ্যাওয়ার্ড। আর এর সাথে দেওয়া হয় হাজার ডলারের একটি খরচের চালান। যা দেখে রীতিমতো হতভম্ব অতিথিরা। যদিও লোকলজ্জায় তারা সামনাসামনি কিছুই বলেননি।
শুধু এই নয় এসব অ্যাওয়ার্ড প্রদানকারী সংগঠন দেশ বিদেশের ধনাঢ্যদের টার্গেট বানিয়ে আয়োজন করেন সঙ্গীতানুষ্ঠানের। আর সেই সঙ্গীতানুষ্ঠানের নাম করে নেমে যান অর্থ তুলতে। সামাজিকতা রক্ষায় এসব নিয়ে জনসম্মুখে কিছু না বললেও বেশ বিরক্ত ভুক্তভোগীরার।
সাম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ রকম এক অ্যাওয়ার্ডের বিষয় জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিউইয়র্কের বাঙালি বলেন, আমাকে বলা হয় সামাজিক কাজে অবদান রাখার জন্য তারা অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন। আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। সব ঠিকঠাক ছিলো। পুরো অনুষ্ঠান শেষে অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়। তার সাথে একটি খামে দেওয়া হয় ১ হাজার ডলারের একটি চালান। যা দেখে রীতিমতো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। এ কেমন কাণ্ড!
এসব বন্ধ চান প্রবাসীরা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা বলছেন এভাবে অ্যাওয়ার্ডের নামে সন্মানিত ব্যক্তিদের লজ্জিত করা আবার অযোগ্যকে যোগ্য স্থানে এনে দেওয়া সমাজের জন্য অনেক বড় ক্ষতিকর বিষয়। এটি দেশে হোক বা বিদেশে হোক কোনভাবেই কাম্য নয়।
তারা বলেন, এরকম অ্যাওয়ার্ড দিলে ধীরে ধীরে অ্যাওয়ার্ডের মর্যাদা চলে যাবে। সমাজের গুণী ব্যক্তিদের মূল্যায়নের আর সুযোগ থাকবে না। তাই এমব বন্ধে সকলকে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার।
প্রবাসীরা আরও বলেন, এসব করে করে অযোগ্য মানুষদের হাতেও অতি সন্মানের ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। যা প্রকৃত সমাজকর্মী বা গুণী মানুষদের জন্য বিব্রতকর। এছাড়া এভাবে পুরস্কার দিয়ে টাকা দাবি করা মোটেও সমীচীন নয়। আমরা এসব বন্ধ চাই।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন