ইফতেখার ইসলাম: করোনার ওমিক্রন ধরণ চিহ্নিতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বেড়েছে করোনা শনাক্তের হার। আর এই নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। সম্প্রতি সিটিতে বেড়েছে করোনা পরীক্ষার হার। করোনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলও বন্ধের ঘোষণা এসেছে; স্থগিত হয়েছে বড়দিনকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে বড় দিনের উৎসব যেন ম্লান হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ওমিক্রনে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। যিনি নিউইয়র্ক ভ্রমণ করেছিলেন। এর পরদিন নিউইয়র্কে ৫ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। তখন থেকে সিটিতে করোনা সুরক্ষায় কড়াকড়ি আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। সিটি প্রশাসন থেকে করোনা সনদের বিধান ও মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। এইদিকে গত শুক্রবার ব্রডওয়ে ও রেডিও সিটিতে বেশ কয়েকটি শো বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ব্রুকলিনে ঈগল একাডেমি ফর ইয়াং মেন -2, ব্রঙ্কসের পিএস ১৮ এবং কুইন্সের রবার্ট ই. পিয়ারি স্কুল ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গেলো দুই সপ্তাহে নিউইয়র্কে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ২২ শতাংশ, কানেকটিকাটে ৭১ শতাংশ এবং নিউ জার্সিতে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। যা সকলকে শঙ্কিত করছে। এখন সিটির জনসাধারণের চিন্তার জায়গা বড়দিনের আগে আরো কোন কড়াকড়ি আসছে কি না? তারা বলছে এমনিতেই বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। তাছাড়া শহরে আগের থেকে কড়াকড়ি বেড়েছে। যদি বড়দিনের আগে নতুন করে আরো বিধিনিষেধ আসে তাহলে সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। আর তা চান না বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কবাসী।
নিউইয়র্কের শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনা সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে স্কুলগুলো সুরক্ষিত রাখতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা। যেখানে করোনার প্রকোপ অতিমাত্রায় সেখানে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আর শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে অনলাইন নির্ভরতা বাড়াচ্ছে তারা। এ ছাড়া স্কুলে মাস্ক ব্যবহার, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার ও টিকা কার্যক্রমে জোর দেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় শিক্ষা বিভাগ।
তবে লকডাউন বা বড় কোন বিধিনিষেধের দিকে নজর নেই বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। তিনি বলেন, এটি ২০২০ সালের মার্চ নয়। নিউইয়র্ক সিটি এখন টিকায় সমৃদ্ধ। আমরা বড় ধরণের কোন বিধিনিষেধে যাচ্ছি না। লকডাউন বা শাটডাউন হলে শহরের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ধস নামবে। যা শহরের সকল জনগণের জন্য ভোগান্তির কারণ হবে। আপাদত আমরা টিকাকরণের উপর জোর দিচ্ছি। এর আগে বৃহস্পতিবার সিটি মেয়র নিউইয়র্কে ওমিক্রন প্রতিরোধে মাস্ক পরা, টিকাকরণ, পরীক্ষা এবং বুস্টার শটসহ ছয়টি নির্দেশনা জারি করেন।
এইদিকে সিনিয়র স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জে ভার্মা বলেছেন, ওমিক্রন দ্রুত বিস্তার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে সক্ষম। ওমিক্রনের তীব্রতা সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানা। তবে এই মুহুর্তে এটি আরও সহজে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই সকল আলোচনা একপাশে রেখে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল সতর্ক করে বলেছেন, মানুষ ওমিক্রনের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করছে। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি সে সম্পর্কে আমি আজকে কিছু বলেছি, কেউ কি শুনেছেন? আমরা সংকটময় পরিস্থিতিতে আছি, মানুষ মারা যাচ্ছে! তিনি সকলকে অনুরোধ করে বলেন, আপনারা নিজেদের যত্ন নিন। নিজে সুস্থ থাকুন পরিবার ও চারপাশ সুরক্ষিত রাখুন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন