শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

নিউইয়র্কে বিভাজন পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না

শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক সিটিতে বিভাজন এবং পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। মঙ্গলবার রাতে বিজয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমি এমন এক নিউইয়র্ক সিটি হলে প্রবেশ করছি, যেখানে বিভাজন এবং পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না। এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, নিউইয়র্কের ভোটাররা ‘বামপন্থি’ জোহরান মামদানিকে মেয়র হিসাবে বেছে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ‘সার্বভৌমত্ব’ হারিয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরার।

ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া উচ্ছ্বসিত ভাষণে মামদানি বলেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্ক প্রমাণ করেছে, এই শহরই অন্ধকার রাজনীতির সময়ে আলোর পথ দেখাবে। তিনি বলেন, এখানে আমরা ভালোবাসার মানুষের পক্ষে দাঁড়াই। আপনি অভিবাসী হোন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, সেই বহু কৃষ্ণাঙ্গ নারী হোন যাদের ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন বা একক মা হোন যিনি এখনো খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন, সবাই নিউইয়র্কের অংশ।

নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র বলেন, এখন আর ইসলামবিদ্বেষ প্রচার করে কেউ নিউইয়র্কে জিততে পারবে না। তিনি সব সম্প্রদায়ের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে মামদানি বলেন, যদি এমন কোনো শহর থাকে, যা ট্রাম্পকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তাহলে সেটি সেই শহর, যেখান থেকেই তার (ট্রাম্প) উত্থান ঘটেছিল। ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ট্রাম্প এই নিউইয়র্কেই জন্মগ্রহণ করেন। আর এখান থেকেই তাদের পারিবারিক ব্যবসার উত্থান ঘটে। উচ্ছ্বসিত জনতার সামনে মামদানি বলেন, কোনো স্বৈরশাসককে ভয় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া, যা তাকে ক্ষমতা দিয়েছে। এভাবেই আমরা ট্রাম্পকে থামাব ও তার পরের জনকেও। তিনি বলেন, আমরা জানি, যেমন ট্রাম্পও জানেন। যখন শ্রমিকদের অধিকার অটুট থাকে, তখন তাদের শোষণ করতে চাওয়া কর্তা শ্রেণিই ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।

মামদানি আরও বলেন, নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর, অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারা চালিত এবং আজ থেকে অভিবাসীর হাতেই নেতৃত্ব থাকবে। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাকে শুনুন। আমাদের কাউকে আঘাত করতে চাইলে, আগে আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ৫৮ দিন পর যখন আমরা সিটি হলে প্রবেশ করব, প্রত্যাশা অনেক থাকবে ও আমরা তা পূরণ করব।

এদিকে মেয়র নির্বাচনে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী মামদানির জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ‘সার্বভৌমত্বের খানিকটা হারিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিয়ামিতে আমেরিকা বিজনেস ফোরামে বুধবার দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর আমেরিকার জনগণ তাদের সরকার পেয়েছিল। আমরা সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সেই সার্বভৌমত্বের কিছুটা আমরা গত রাতে নিউইয়র্কে হারিয়েছি, কিন্তু আমরা সামলে নেব।

নিউইয়র্কের জন্য মামদানির যে স্বপ্ন তা মূলত তার দল ডেমোক্র্যাট পার্টির যুক্তরাষ্ট্রকন্দ্রিক স্বপ্নেরই প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকাকে কী বানাতে চায়, তা যদি দেখতে চান, তাহলে গত রাতে নিউইয়র্কে নির্বাচনের ফল দেখুন, যেখানে তাদের পার্টি দেশের সবচেয়ে বড় শহরের মেয়র হিসাবে একজন কমিউনিস্টকে বসিয়েছে। যেমনটা আমি বহু বছর ধরে সতর্ক করছি, আমাদের বিরোধীরা আমেরিকাকে কমিউনিস্ট কিউবা বা সোশ্যালিস্ট ভেনিজুয়েলা বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যখন মামদানির শাসনে নিউইয়র্ক ‘কমিউনিস্ট’ শহরে পরিণত হবে, নিউইয়র্কবাসী তখন ফ্লোরিডায় পালাতে বাধ্য হবে।

পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নির্বাচনের রাতে মামদানির বিজয় ভাষণকে ‘খুবই ক্রুদ্ধ ভাষণ’ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তার (মামদানি) শুরুটা খুবই খারাপ হলো। তিনি যদি ওয়াশিংটনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হন, তাহলে তার সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় তার আমার প্রতি সদয় হওয়া উচিত। আপনারা জানেন, তার দিকে যাওয়া অনেক কিছুতে মূলত আমাকেই অনুমোদন দিতে হবে। সে হিসাবে তার জন্য এটা বেশ বাজে শুরু হলো। এতকিছুর পরও মঙ্গলবারের ফলাফলের দায় নিতে অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, কিছু বেনামি জনমত জরিপকারী বলেছে, রিপাবলিকানদের পরাজয়ের কারণ হলো সরকারের অচলাবস্থা (শাটডাউন)।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন