নিজস্ব প্রতিবেদক: নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় নির্বাচনে আমেরিকার নাগরিক নন এমন প্রায় ৮ লাখ মানুষদের ভোটাধিকার দিতে নতুন আইন অনুমোন দিয়েছে সিটি কাউন্সিলররা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) ‘আমাদের শহর আমাদের ভোট’ শীর্ষক আইন পাস করা হয়েছে। কাউন্সিল ফ্লোরে কয়েক ঘন্টা উত্তপ্ত বিতর্কের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। যেখানে সিটির নন- নাগরিকদের ভোটের অধিকার মঞ্জুর করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, বিলের অধীনে যারা কমপক্ষে ৩০ দিন ধরে শহরে বসবাস করেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা তারা ভোট দেওয়ার অনুমতি পাবেন। সেক্ষেত্রে তারা কেবল মেয়র, সিটি কাউন্সিলের সদস্য এবং পৌরসভার অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। নাগরিক নন এমন বাসিন্দারা এখনো কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেস সদস্য অথবা রাজ্যের গভর্নর, বিচারক ও আইনপ্রনেতা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
এই আইনটি ১ জানুয়ারী থেকে কার্যকর হবে এবং অনাগরিকদের ভোটাধিকার সম্প্রসারণের জন্য নিউইয়র্ককে দেশের বৃহত্তম এখতিয়ারে পরিণত করবে৷ যোগ্য অ-নাগরিকরা ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করা শুরু করতে সক্ষম হবে এবং একবার নিবন্ধিত হলে ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারির স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া শুরু করতে পারবে।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনস এখন ২০২৩ সালের শহরের পরবর্তী স্থানীয় নির্বাচনের আগে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নির্ধারণ করার দায়িত্বে রয়েছে। অনাগরিকরা বিভিন্ন ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ব্যবহার করে নিবন্ধন করবে এবং নির্বাচনের দিন আলাদা ব্যালট ব্যবহার করে ভোট দেবে।
সিটি কাউন্সিলের স্পিকার কোরি জনসন বলেছেন,”মানুষের জন্য আরও বেশি ভোটাধিকার তৈরি করতে আমরা আজ একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। যেটি নিউ ইয়র্কসিটিতে গণতন্ত্র প্রসারিত করবে। নাগরিক এবং স্থানীয় বিষয়গুলির সাথে সকল মানুষকে সম্পৃক্ত করবে।
সিটি কাউন্সিলম্যান ইডানিস রদ্রিগেজ বলেছেন, আমরা সকলের জন্য ভোটাধিকার অনুমোদের মাধ্যমে সকল বাসিন্দাদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছি। এটি শুধুমাত্র নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য একটি রোল মডেল হবে।
কাউন্সিলম্যান মার্ক গজোনাজ বলেন, “এই বিলটি এখন থেকে অনুমতি দিতে যাচ্ছে যে কেউ কাজের ভিসায় সিটিতে এসে ৩০ দিন পার করলে সে ভোট দিতে পারবে।
কাউন্সিলম্যান কার্লোস মেনচাকা বলেছেন, “আমাদের এখন যা করতে হবে তা হল একটি সিটি ভোটিং প্রক্রিয়া তৈরি করা যা আইনত অনুমোদিত বাসিন্দাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেয়।”
অংশগ্রহণকারী মেলিসা জন বলেন, “আমি একজন শিক্ষক। আমি সবসময় আমার ছাত্রদের বলি প্রতিনিধিত্বের জন্য দেখে শুনে কাউকে নির্বাচিত করা জরুরি। সুতরাং আমার মতো কয়েক হাজার অভিবাসী নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দারা অবশেষে রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেখব শোনার জন্য সঠিক ব্যক্তি বাছাই করতে পারবো। এই পদক্ষেপটি নিউইয়র্ক সিটিকে সবচেয়ে বড় মার্কিন শহর হিসাবে অ-নাগরিকদের ব্যালটে অ্যাক্সেস দেবে।
নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের অনু যোশি বলেন, “আমাদের শহরের ভবিষ্যতের জন্য যারা বিনিয়োগ করছেন তারা আমাদের শহরের দিকনির্দেশনা দিলে আমরা সবাই ভালো থাকব। এরা কয়েক দশক ধরে এখানে বসবাস করেছে, তাদের বাচ্চাদের এখানে বড় করছে, তাদের বাচ্চারা পাবলিক স্কুলে রয়েছে। তারা নিউ ইয়র্ক সিটিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। বিলের পক্ষে যুক্তির একটি অংশ হল যে এই নিউ ইয়র্কবাসীরা কর দেয়, তাদের সম্প্রদায়ে বিনিয়োগ করে এবং শহরে অবদান রাখে।”
রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির (আরএনসি) চেয়ারওম্যান রোনা ম্যাকড্যানিয়েল নিউইয়র্ক সিটির পৌর নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমেরিকান নাগরিকদের আমেরিকান নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। নিউইয়র্কে আজকের সিদ্ধান্তটি একটি উগ্র, ক্ষমতা-ক্ষুধার্ত ডেমোক্র্যাট পার্টির পণ্য যা নির্বাচনের অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কিছুতেই থামবে না। বিদেশী নাগরিকদের দ্বারা আমাদের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।
এইদিকে সিটি কাউন্সিলরদের অনুমোদিত এই আইনি পাস হতে এখন দরকার মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর স্বাক্ষর। ডি ব্লাসিও বিলটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করতে দ্বিধাগ্রস্ত। তিনি আইনটির প্রজ্ঞা ও বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তেকে তিনি সন্মান করেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া নব নির্বাচিত নগর পিতা এরিক অ্যাডামস বিলটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এই ধারণার সাথে একমত পোষন করেছেন তিনি।
আইআই/
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন