শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নিত্যপণ্যের অসহনীয় দরে নাকাল জনজীবনে

শনিবার, আগস্ট ২০, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ইফতেখার ইসলাম: বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে তর তর করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়ছে মধ্যভিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম নয়। গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির পর একে একে বেড়েই চলেছে সব পণ্যের দাম।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে দাম বেড়েছে চাল, মাছ, মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, সবজিসহ বেশ কিছু পণ্যের।

প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার ১৯০ টাকা, ইলিশ মাঝারি সাইজের কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, আর মিনিকেট চালের কেজি ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ টাকা।

এছাড়া আগের থেকে ১০-১৫ টাকা করে বেড়েছে সবজির কেজিতে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শিম। এছাড়া টমেটো ও গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ও চিচিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন মধ্যভিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষজন। অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন বেতনের সাথে সামঞ্জস্য করে চলতে। ব্যয় সংকোচন করেও হচ্ছে না সমাধান। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন পাইকার দর বেড়ে যাওয়া ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে।

হিসাবের খাতায় ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে:

দফায় দফায় দেশে পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষদের। আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় প্রতি মাসেই করতে হচ্ছে ধার দেনা। এতে করে নিয়মিতভাবে বাড়ছে ঘাটতির খাতা।

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় বসবাস করা এক বোসরকারি চাকুরিজীবি মো.রায়হান উদ্দিন বলেন, চাকরি নিয়েছি সবে কিছুদিন হলো। পরিবার নিয়ে শহরে থাকছি। নিয়মিত বিরতিতে দেশে পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এতে করে যে বেতন পাচ্ছি তা দিয়ে বাসা ভাড়া,গ্যাস, বিদ্যুৎ ও খাবার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

সিয়াম আহামেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবার থেকে আগে সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে আসতাম। তাতেই চলে যেতো। কিন্তু এখন ৬ হাজার টাকা এনেও কুলানো সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হতে থাকলে দেখা যাবে পড়াশোনাই বাদ দিতে হবে৷

এইদিকে পরিবার চালাতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন রিকশাওয়ালা, দিনমজুরসহ প্রয় সব শ্রেণির মানুষ। আর তাদের দাবি সঠিক পন্থা অবলম্বন করে সরকারের উচিত পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনা।

এইদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় তবে সামনে আরো বাড়তে পারে। এভাবে দাম বাড়ার কারণে যারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা হলো নিম্ন আয়ের মানুষজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের পণ্যের যাতে সংকট না পড়ে সেজন্য কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ অন্তত নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়বে না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে দারিদ্র বান্ধব অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে শুধু বড় লোক বড় না হয়ে নিম্নআয়ের মানুষের আরো উন্নতি হবে।

এসময় তিনি সকলকে জ্বালানি তেল ব্যবহারে আরো যত্নশীল হওয়ারও আহ্বান জানান।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন