ফখরুল ইসলাম: আওয়ামী দু:শাসনের সময় গত ১৬ বছর গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য-সৌহার্দ গড়ে উঠেছিল। এমনকি গত নির্বাচনেও ভোটে না যাওয়ার ব্যাপারেও বিরোধী দলের প্রায় সবদল একমত ছিলেন। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সংস্কার ও নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি তাতে ফাটল ধরেছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ বাড়তে থাকায় দলগুলোর মধ্যে দোষারোপের রাজনীতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতির দিকে নজর দিচ্ছে অনেক রাজনৈতিক দল, যেমন- এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন এবং কমিউনিস্ট পার্টি। তবে বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসছে। প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই রয়েছে তারা। এ নিয়ে বিএনপির সাথে অনেকটাই দূরত্ব বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর। এমনকি ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের ইসলামী ঢাকাতে নিজেদের সমাবেশে বাকী দলগুলোর প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানালেও বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এছাড়া পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও সেøাগান পরিস্থিতিকে করেছে আরও উত্তপ্ত।
বিএনপি বলেছে, সম্প্রতি পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও সেøাগান গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত অশ্লীল বক্তব্য ও সেøাগান গোটা জাতিকে বিক্ষুব্ধ করেছে।
তাদের মতে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের কয়েকজন নেতার এসব বাগযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এরমধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামী দলের মধ্যে জোট হচ্ছে জানিয়ে দুদলের কয়েকজন নেতা তাদের বক্তৃতায় বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো ব্যালট একটাই থাকবে। তাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা, আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বড় ঐক্য হতে চলেছে। এছাড়া বিএনপি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে চাপ দিয়ে এলেও জামায়াত এগোচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। দলটি প্রয়োজনীয় ও অতি জরুরি সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন চায়। এজন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায় সরকারকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও জামায়াত বিএনপির বিপরীত অবস্থানে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচন চায় না। অপরদিকে জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। কয়েকটি বিষয় নিয়ে কঠোর অবস্থানের আছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারমধ্যে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, নতুন সংবিধান রচনা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, এমনকি রেফারেন্ডাম বা গণভোটের আয়োজন নিয়েও কথা বলে এ দলের নেতারা। কিন্তু সংবিধান বাতিল এবং নতুন সংবিধান রচনা নিয়ে দ্বিমত পোষন বিএনপির। এছাড়া কক্সবাজারে এনসিপির জুলাই যাত্রায় বিএনপির আলোচিত নেতা সালাউদ্দিনকে নিয়ে নেগটিভ কথা বলায় চকরিয়ায় এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বিএনপি। তাতে বিএনপি ও এনসিপির দূরত্ব অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান মতবিরোধগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করা দরকার। তা না হলে নির্বাচন নিয়ে একটি আশঙ্কা থেকেই যায়। কারন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে আগামী সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অনেকটাই কঠিন। আর সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক পথে আমরা আর যেতে পারবো না। যেটি আমরা গত ১৬ বছরে পারিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, রাজনীতি কখনোই বিরোধমুক্ত হবে না, এটাই বাস্তবতা। রাজনীতিতে একাধিক দল থাকবে, প্রত্যেকের মতামতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে সেই ভিন্নতা যে বিভেদে রুপ না নেয় সেটিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। কারন বিভেদে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তখন রাজনৈতিক সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন