শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

পঞ্চাশের বিজয়ে পোশাক রাঙুক লাল – সবুজ

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১

প্রিন্ট করুন
received 540777949897448 1

শাহীন চৌধুরী ডলি: 

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে, ৩০ লক্ষ শহীদের এবং লক্ষ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে নতুন দেশ বাংলাদেশের নিজস্ব মানচিত্র। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল বহু আকাঙ্খিত বিজয়। স্বাধীন বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতি বছর নানান অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসকে উদযাপন করি আমরা।

বিজয় দিবস মানেই বাংলাদেশীদের জন্য অনেক আবেগ এবং অহংকারের দিন। বাঙালির লাল-সবুজের সঙ্গে সখ্য রক্তে মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইতিহাস বুকে ধারণ করে তাই তো বাঙালি বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে চায় ভিন্ন আমেজে। এই বিশেষ দিনের উৎসবকে ঘিরে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের ট্রেন্ড ফ্যাশনেও আনে নানা পরিবর্তন। জাতীয় পতাকার প্রিয় লাল-সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকাটিতে সেজে ওঠে দিনটি। আর তাই ট্রেডিশনাল পোশাকের সাজে সাজানো হয় বিজয় দিবসের সংগ্রহ। 

সবুজের মধ্যে লাল, সবুজ বাংলাদেশের বুকে শহীদের রক্তের প্রতীক যেন। এই মাসেই আপামর বাঙালি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর সেই স্বাধীনতার চেতনা এখন শুধু পোশাক- পরিচ্ছদ কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ফ্যাশনসচেতন হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধকে শানিত করে তুলেছে বহুগুণ। উৎসব -পার্বণ ছাড়াও বিজয় দিবসের ফ্যাশনগুলো আকর্ষণ করে সব বয়সী ক্রেতাকে। এই দিনে ছেলে – মেয়েরা বিশেষ সাজে সেজে থাকেন। জাতীয় এই বিশেষ দিনে পুরুষদের পোশাক মানেই যেন পাঞ্জাবি। কেউ পরেন পায়জামার সাথে আবার কেউ কেউ পাঞ্জাবির সাথে বেছে নেন জিন্স। আজকাল অনেক তরুণ বিশেষ দিবসের রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে টি-শার্ট পরছেন। শিশুরাও বাদ যায় না। তারাও সাজে লাল -সবুজের ধারায় এবং মেতে থাকে স্বাধীনতার আনন্দে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাঈশার সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা বললাম। বিজয় দিবসের বিশেষ পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, প্রতিটা উপলক্ষের একটা নিজস্ব ফ্লেভার থাকে। তার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পড়তে ভালোবাসি। উপলক্ষের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরলে অনেক বেশি একাত্ম হওয়া যায়। বাংলা বর্ষবরণে লাল-সাদা পোশাক বেছে নিতে বেশিরভাগ মানুষকে দেখা যায়। একুশে পড়া হয় সাদা-কালো। স্বাধীনতা দিবসে এবং বিজয় দিবসে লাল-সবুজ শাড়ি -পাঞ্জাবি পরাটা সেই উদযাপনেরই অংশ। 

কয়েকবছর আগেও নারীরা স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসে পোশাক হিসেবে শাড়িকেই বেছে নিতো। এই প্রিয় দুটি দিবসে পোশাকে একচেটিয়াভাবে রঙের স্থান দখল করে ছিল লাল-সবুজ। শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, কুর্তি, ফতুয়া পরার চল বেড়েছে। বিশেষ এই দিনের পোশাকের রঙেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। লাল-সবুজের সাথে সহকারী রঙ হিসেবে থাকে সাদা, কমলা, হলুদ, গোল্ডেন হলুদ, টিয়া। পোশাকের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে আছে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট হাতের কাজ ইত্যাদি। 

বিজয়ের মাসে পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। আমাদের ফ্যাশন হাউজগুলো নতুন প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। ডিজাইনারদের ডিজাইনের বড় অংশ জুড়ে থাকে দেশাত্মবোধের চেতনা। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিজয়ের দিবসে তাদের বিক্রির তালিকায় লাল-সবুজ রঙের পোশাকের প্রাধান্যই বেশি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে সেজেছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের পোশাকের শো-রুমগুলো। দোকানের সামনে সাজানো পুতুলগুলোর গায়ে চড়েছে লাল-সবুজ শাড়ি, পাঞ্জাবি। গাঢ় সবুজ টি-শার্টের বুকে কোথাও পতাকার লাল সূর্য, কোথাও স্লোগান। লাল-সবুজের আঁচড়ে সাজানো পোশাকগুলো যেন একেকটি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিশেষ করে, শাড়ি – পাঞ্জাবি -সালোয়ার কামিজে আমাদের জাতীয় পতাকার লাল-সবুজের পাশাপাশি পতাকায় থাকা হলুদ রঙে আঁকা মানচিত্রও থাকে। স্ক্রিনপ্রিন্ট করা শাড়ি ও পাঞ্জাবিও বিশেষ আকর্ষণীয়। 

ছেলেদের ফ্যাশনেও প্রতি বছর থাকে বৈচিত্র‍্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লাল-সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে বিজয়ের আমেজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে পোশাকে। বিজয় দিবসের পোশাকের আয়োজনে ছোটদের জন্য ফ্যাশন হাউজগুলো তৈরি করেছে লাল – সবুজ আর টিয়া-কমলা  রঙে ছোট মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, টপস ও ফতুয়া। আর ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট সাজানো হয়েছে স্বাধীনতার রঙে। বিজয় দিবসের পোশাকে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কবিতা, স্লোগান, মিছিল, স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি, গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন মুহুর্ত, দেশাত্মবোধক গানের লাইন ও বর্ণমালা। 

দিবসভিত্তিক পোশাকের ব্যাপারটা আমাদের সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আমাদের দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা।দিবসের সাথে ফ্যাশনের ধারাটা চালু থাকা প্রমাণ করে আমাদের জাতীয় জীবনের বড় প্রাপ্তির ইতিহাস – বিজয় দিবস। ৭১-এর আত্মত্যাগের বাঙালির ধরনটা যেমন হৃদয়ছোঁয়া, মর্মস্পর্শী, আবেগঘন তেমনি আনন্দময়তা কম নয়। ফলে দুটি রূপের প্রতিফলন বিস্মিত হয় জাতীয় দিবসগুলোর ফ্যাশন কনসেপ্টে। 

বিজয় দিবসের রঙ দিয়ে রাঙানো পোশাকগুলো পাওয়া যাবে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ আড়ং, অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশ, বিবিয়ানা, নিত্যউপহার, নিপুণ, বাংলার মেলা, নবরূপা সহ অন্যান্য অনেক ফ্যাশন হাউজে। ব্যবসায়ীরা বলেন, শুধু ব্যবসায়িক কারণে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেম থেকেই তারা স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজন করে থাকেন। এসব পোশাকের মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রাখা হয়েছে । 

বর্তমানে করোনার প্রকোপ অনেক কমে এসেছে। তবু উৎসব পালন করতে গিয়ে মাস্ক পরার কথা ভুলে গেলে চলবে না। প্রিয় পোশাকের সঙ্গে অবশ্যই মাস্কটি পড়ে নিন এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী   দিবসটিকে আমরা স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা এবং স্বজন হারানোর শোক ও দেশের প্রতি ভালোবাসায়।

ছবি: বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিশ্বের ১৫০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক স্পর্শ করা নাজমুন নাহার

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন