চট্টগ্রাম: পাকিস্তানি নাগরিকদের ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে পরিত্যাক্ত সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎতের পরিকল্পনাকারীকে থানায় সোর্পদ করেছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) নূরুল্লাহ নূরীর সভা কক্ষে তদন্তের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আনোয়ারুল হক নিজেকে হাসেমীর সন্তান দাবি করেন। হাসমীর জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। পরে মো. আনোয়ারুল হক এবং তার তসলিম উদ্দিনকে আটক করা হয়।
জানা যায়, সৈয়দ আহামদ হাসেমী নামের পাকিস্তানি এক নাগরিক ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। চট্টগ্রামের পাচঁলাইশ থানাধীন পূর্ব নাসিরাবাদ মৌজার (চট্টগ্রাম শিল্পকলার পাশে) ০ দশমিক ৮০৯৩ একর সম্পত্তি প্রেসিডেন্ট অর্ডার (পিও) ১৬/৭২ আইন অনুযায়ী সরকার সৈয়দ আহামদ হাসেমী নামের পাকিস্তানি ওই নাগরিকের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৯ জনকে একসনা লিজ প্রদান করেন। ওই লিজ গৃহীতারা এখনো পর্যন্ত ভোগ দখলে রয়েছেন। এ সম্পত্তির বাজার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে এসে সৈয়দ আহামদ হাসেমীর সন্তান দাবি করেন আনোয়ারুল হক নামের এক ব্যক্তি। তিনি সৈয়দ আহামদ হাসেমীকে পিতা উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্রও সৃজন করেন। সেই জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (২৬২৭২০৫৫৫৪৬১৭)। ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হাসেমীর ০ দশমিক ৮০৯৩ একর সম্পত্তি মো. নুরুল আলম ও আব্দুল গফুর নামের দুই ব্যক্তিকে পাওয়ার অব এর্টনি (আম-মোক্তারনামা দলিল) প্রদান করেন আনোয়ারুল হক।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সঙ্গে কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী (বর্তমানে সবাই বদলি) মো. নুরুল আলম ও আব্দুল গফুর এ জমি আত্মসাতের পায়তারা করেন। ডিসি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অসাধুরা এ জমি আত্মসাতের খবর জানতে পারেন লিজ নেওয়া ৯ ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে তারা ভূমি উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে ২০২৫ সালের ৪ জুন ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তের শুরুতেই নূরুল্লাহ নূরী আনোয়ারুল হক কর্তৃক সৃজিত জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যতা যাচাই করার জন্য চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। পরে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস থেকে হাসেমীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (২৬২৭২০৫৫৫৪৬১৭) কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানান।
মো. নুরুর আলম বলেন, জায়গাটি আমাদেরকে পাওয়ার অব এর্টনি দিয়েছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক হাসেমীর সন্তান দাবি করা আনোয়ারুল হক ও তার সহযোগী তসলিম হোসেন। তারা পরস্পর যোগসাজশে জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আম-মোক্তানামা সৃজন করেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, এর মাধ্যমে দলিল গ্রহীতা ও পরবর্তী বহুবার এই জায়গা হাত বদলের মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষের প্রতারিত করেছেন। পরে আনোয়ারুল হক ও তার সহযোগী তসলিম হোসেনকে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন