ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) নৌবাহিনী পারস্য উপসাগরে বৃহৎ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–সমৃদ্ধ উন্নত প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ সক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া এ মহড়ায় আইআরজিসি নৌবাহিনী তাদের গোয়েন্দা প্রস্তুতি, সামরিক সক্ষমতা এবং যেকোনো হুমকির মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিরোধের মনোভাব তুলে ধরেছে।
একই সঙ্গে এ অঞ্চলে উপস্থিত মার্কিন নৌযানগুলোর প্রতি স্পষ্ট সতর্কবার্তাও পাঠানো হয়।
মহড়ায় নবাব, মাজিদ, মিসাঘসহ আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এসব সিস্টেম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অতি অল্প সময়ে আকাশ ও নৌ-লক্ষ্য শনাক্ত করে উচ্চ নির্ভুলতায় আঘাত হানে।
‘শহীদ মোহাম্মদ নাজেরি’ কোডনামের মহড়াটি পারস্য উপসাগর, নাজেয়াত সামুদ্রিক অঞ্চল—আবু মুসা, গ্রেটার টুম্ব, লেসার টুম্ব, সিরি দ্বীপপুঞ্জ—হরমুজ প্রণালি এবং ওমান উপসাগরজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শহীদ নাজেরি ছিলেন আইআরজিসি নৌবাহিনীর এলিট কমান্ডো ইউনিটের নেতা। তিনি ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি ইরানের সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়া ১০ মার্কিন নৌসেনাকে আটক করার ঘটনায় বিশেষভাবে পরিচিত।
মহড়াটি প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্দেশে শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা দিলেও ইরান শত্রু শক্তিকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে- যে কোনো ভুল পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইরান-মার্কিন নৌ উত্তেজনার দীর্ঘ ইতিহাস
১৯৮০-এর দশক থেকে পারস্য উপসাগর, ওমান উপসাগর ও হরমুজ প্রণালিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মধ্যে বারবার মুখোমুখি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইরান প্রায়ই বৃহৎ মহড়া পরিচালনা করে তাদের সামরিক সক্ষমতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখায়।
এদিকে ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আমির হাতামি বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে জানান— ইরান তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে ‘এক মুহূর্তও নষ্ট করেনি।’
তিনি বলেন, ইসলামি ব্যবস্থার ক্ষতি মানে দেশের স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ক্ষতি।
হাতামি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের শত্রুতা ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকেই চলছে এবং সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হয়েছে।
জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের উল্লেখ করে হাতামি দাবি করেন— ‘১৩ জুন ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইরানের ওপর অঘোষিত যুদ্ধ চালায়, যাতে বহু উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষ নিহত হন।’
এক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়—যা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং এনপিটিকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করে।
এর জবাবে ইরানি বাহিনী ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চল এবং কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
হাতামির দাবি, শত্রুরা ইরানের পারমাণবিক, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস করে সরকারকে উৎখাত করতে চাইলেও তারা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।ইরানের জয় হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসরাইল ইরানকে ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ মনে করে।
মূলত ১২ দিনের ওই যুদ্ধের পর থেকেই ইরান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সূত্র: প্রেস টিভি



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন