শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

প্রবাসীদের জন্যও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় প্লেজার ট্রিপ ও পার্টি

শুক্রবার, আগস্ট ৬, ২০২১

প্রিন্ট করুন
Pori Moni 2106181233 1

ঢাকা: ঢাকার বনানী থেকে গ্রেফকারকৃত চিত্র নায়িকা পরীমনি ও নজরুল ইসলাম প্রকাশ রাজকে জিজ্ঞাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। নজরুল ইসলাম রাজ শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগীতায় ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ওই সিন্ডিকেটটি ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীতে  পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানা অনৈতিক কাজের ব্যবস্থা করে থাকে। ওই পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরণের পার্টির আয়োজন করা হত। আগত ব্যক্তিদের চাহিদা ও পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পার্টিগুলো আয়োজন করা হত। নজরুল ইসলাম রাজের সিন্ডিকেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপব্যবহার করতেন। তার ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হত। এ জাতীয় অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার বালু ভরাট, ঠিকাদারী ও শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। এসব ব্যবসায়ে বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন রাজ।

জানা যায়, অভিযান চালিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা থেকে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে শরিফুল হাসান মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম জিসানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঢাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য দেয়। এতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজর বৃদ্ধি করে।

এর ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে বুধবার (৪ আগস্ট) বিকাল হতে রাত পর্যন্ত ঢাকার বনানীতে অভিযান চালিয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি প্রকাশ স্মৃতিমনি প্রকাশ পরীমনিসহ (২৬) চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত অপর তিনজন হল- গোপালগঞ্জের মো. নজরুল ইসলাম রাজ (৩৯), মানিকগঞ্জের মো. আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) (পরীমনির ম্যানেজার) এবং পাবনা সদদরের মো. সবুজ আলী (৩৫) (রাজের ম্যানেজার)। এ সময় মিনি বার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জাম, ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদসহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশী মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী, এলএসডি, আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত পরিমনি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানা এলাকার মৃত মনিরুল ইসলামের কন্যা। তিনি পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০১৪ সালে চিত্র জগতে পা রাখে। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা ও ৫-৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন। পিরোজপুর হতে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে অবস্থান তৈরিতে গ্রেফতারকৃত নজরুল ইসলাম রাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জিজ্ঞাবাদে পরীমনি জানান।  

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং জানায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত এ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি অয়োজন পরিপূর্ণতা পেত। নজরুল ইসলাম রাজসহ আরো অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশগ্রহণ করত।

নজরুল ইসলাম রাজকে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, সে ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে সে বিভিন্ন ব্যবসায়-বানিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের সাথে সাথে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

গ্রেফতারকৃতদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন