শারমিন রিমা >>
করোনা মহামারির প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে দীর্ঘ দেড় বছরের টানা বন্ধ শেষে গত ১৩ সেপ্টেম্বর খুলেছে নিউইয়র্কের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা আতঙ্ক ভুলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘ বন্ধের পর আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮ মাস পর চিরচেনা ইউনিফর্মে এলেও আগের মতন সাথে করে আনতে হয়নি কাঁধে ব্যাগ কিংবা বইখাতা। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রমে অভ্যস্ততা বাড়ায় নতুন নির্দেশনা অনুযায়ীই চলছে পাঠক্রম।
তবে, ইউনিফর্মের সঙ্গে এবার শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হচ্ছে। এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এখনও পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। সেই সাথে স্কুল খোলার প্রথমদিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও রাখা হয়। যাতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে নিউইয়র্ক আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম চালু থাকে এবং কোনো একজন শিক্ষার্থীও করোনায় নতুন করে আক্রান্ত না হয়।
করোনা পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে স্কুলের চেনা পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ভিন্নরুপে ক্লাসে ফিরে আসার প্রসঙ্গে অভিভাবক নুর নাহার বলেন, ‘ করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মার্চের পর থেকে দীর্ঘদিন টানা স্কুল বন্ধ থাকায় বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদেরও মানসিক সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি আগের তুলনায় কম আর মানুষের মাঝে আতঙ্কও অনেকখানি কমে গেছে। এখন যেহেতু স্কুল খোলা হয়েছে তাই সেই অবস্থা থেকে বাচ্চারা দ্রুত বের হয়ে আসতে পারবে।’
শিক্ষার্থী মাশরুবা সায়েরার অভিভাবক আজিজুল হক বলেন,’ করোনা পরিস্থিতির আগে বাচ্চাদের বইখাতা ব্যাগ নিয়ে স্কুলে আসতে হতো। যাতে আবার নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে না যায় তাই এখন সেসব আনতে হচ্ছেনা। অনলাইনের মতনই ক্লাস চলছে। বিষয়টা ভালো হয়েছে এবং টাচস্ক্রীন মনিটরেই বাচ্চাদের ক্লাস হচ্ছে। স্কুল খোলার পর কোনো ডকুমেন্টস হাতে দিতে হয়নি। টিচাররা ইমেইলে যাবতীয় ডকুমেন্টস লিংক দিয়েছে, আমরা সেখানেই আপলোড দিয়ে দিয়েছি। ‘
আরেক অভিভাবক জেমস ফ্রেজার জানান, ‘ এখানকার স্কুল কর্তৃপক্ষ (নিউইয়র্ক আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড) একটা বিষয় খুব ভালো করেছেন সেটা হচ্ছে টাচস্ক্রীন মনিটরের মাধ্যমে বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছেন। কোনোধরনের বইখাতা বা ব্যাগ বয়ে স্কুলে আনতে হচ্ছেনা এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধুমাত্র খাবার গ্রহণের সময় মাস্ক খুলতে পারবেন। আমি মনে করি, কোভিড পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য যাবতীয় গাইডলাইন মেনে চলা উচিত।
শিক্ষার্থী মাশরুবা সায়েরা জানান, ‘অনলাইন ক্লাস করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। দেড় বছর পরে স্কুলে এসে ভালো লাগছে আর বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর আজ দেখা হয়েছে। দারুণ লাগছে স্কুলে এসে ক্লাস করতে পেরে।’
জ্যামাইকার লিবার্টি এভিনিউর কিউ ফিফটি কিন্টারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষিকা লোমেজ জানান, বিদ্যালয়ের ভিতরে বাচ্চাদের তিন ফিট দূরত্ব বজায় রেখে বসানো হচ্ছে। অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়ার সময় মাস্ক পরিধান করার কথা বলা হয়েছে। আমরা যেহেতু স্কুল বন্ধকালীন সময়ে দীর্ঘদিন অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস করিয়েছি তাই স্কুলেও সেসব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের এখানে বড় টাচস্ক্রীন মনিটর আছে এবং সেখানেই বাচ্চাদের ক্লাস করানো হচ্ছে। আমরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছি।’
এদিকে, নিউইয়র্ক আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমায় নিউইয়র্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হয় এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। সেইসাথে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষক ও স্টাফদের ভ্যাকসিন নিতে হবে।’
অন্যদিকে, স্কুলখোলার প্রতিবাদে অভিভাবকদের একটা অংশ ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সম্পূর্ণ কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যাতে স্কুল না খোলে সে দাবীতেই এ বিক্ষোভ মিছিল হয়।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন