চলমান ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নিজ বাসভবনে বাইরে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত মোদাসসার খন্দকার জ্যোতির (৩৬) পরিবারের আহাজারি যেন থামছেই না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।
নিউইয়র্ক সিটির ওজোনপার্কের সিটি লাইনের ওই বাসায় দেখা যায়, স্বামীকে হারিয়ে আহাজারি করেছেন তার স্ত্রী তাওহিদা ইসলাম তৃষা। পাশেই দাঁড়িয়ে চার বছরের ছেলে নির্বাক।
ছেলের অকাল মৃত্যুতে শোকে বিভোর তার মা ও ভাই। বাংলাদেশ থেকে সেখানে তার বাবার ফেরার কথা ছিল রোববার। তার দুদিন আগেই ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তিনি। নিউইয়র্কে তিনি ফিরলেই জ্যোতির দাফনের সিদ্ধান্ত হবে।
জ্যোতির বাড়ি মানিকগঞ্জে। নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের কর্মী ছিলেন তিনি। পরিবার নিয়ে ফরবেল স্ট্রিটের বাসায় থাকতেন।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় দিনগত রাত ১২টার পর নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের সাইপ্রেস হিলস সেকশনে তিনি নিহত হন। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে বাড়ির কাছে মোদাসসারের মাথায় গুলি করা হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর খবরে বুধবার দুপুরে সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির বাসিন্দা মাজেদা এ উদ্দিন জ্যোতির পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে যান। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু শোনেন।
পরিবারের সদস্যরা মাজেদাকে জানিয়েছেন, ১০ ফেব্রুয়ারি জ্যোতি ও তার স্ত্রী তৃষার মার্কিন নাগরিত্ব পাওয়ার সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু রাতেই ঘাতকের গুলি সব ওলটপালট করে দিয়েছে। কমিউনিটির সদস্যরা শোকার্ত পরিবারের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন।
মোহাম্মদ উদ্দিন নামে এক প্রতিবেশি বলেন, “এ ঘটনা আমার বাড়ির পাশেই ঘটেছে। আমি আমার ছোট বাচ্চাদের নিয়ে শঙ্কিত, তারা কিভাবে স্কুলে যাবে?”
তিনি বলেন, “মোদাসসার খন্দকার একজন ভালো মানুষ ছিলো। তার সাথে কারও শত্রুতাও ছিলো না। আমরা তাকে ভালোভাবেই চিনি। এ ঘটনা দুঃখজনক।”
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট খায়রুল ইসলাম কুকন বলেন, “আমরা ব্রুকলিন এবং কুইন্সের সীমান্তে আছি। প্রতি সপ্তাহে আমাদের অনেক ব্যবসায়ের মালামাল ছিনতাই হয়। গত কয়েক সপ্তাহে এই এলাকায় আমি কয়েকটি গুলির শব্দ শুনেছি। আর আজকের ঘটনা আমাদের আরো শঙ্কিত করে তুলেছে। “
তিনি আরো বলেন,”শহরের রাস্তা থেকে এই বন্দুক অপসারণে কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। এই বন্দুকগুলো নিউইয়র্কের নয়, এগুলো অন্যত্র থেকে আসে। কর্তৃপক্ষকে সেই পথ খুঁজে পেতে হবে এবং বন্দুক সহিংসতা রোধ করতে হবে।”
পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহত ব্যক্তি গাড়ি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
ব্রুকলীন এবং কুইন্সের সীমান্ত বরাবর ওজোনপার্কের ওই এলাকাটি সিটি লাইন হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরে মসজিদে নামাজ শেষে ফেরার পথে সিটি লাইনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জি ও তারা মিয়া নামের দুই বাংলাদেশি।
আলাউদ্দিন ওজোন পার্ক এলাকার আল-ফোরকান জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। আলাউদ্দিনের বন্ধু তারা মিয়ার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটায়।
তারও আগে ২০১৪ সালের ৯ জুলাই ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম।
আইআই/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন