বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষা করবেন যেভাবে

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

লাইফস্টাইল প্রতিবেদক: বন্যার পর স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বন্যার পানি নানা রকমের রোগজীবাণু বহন করে; যা মানুষের দেহে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বন্যার পর সঠিক পদক্ষেপ না নিলে করলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, সংক্রামক ব্যাধি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বন্যার পরবর্তী বিভিন্ন দিক থেকে পরিকল্পনা করা জরুরি, যেমন নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পুনর্গঠন এবং সামগ্রিক জীবিকা নির্বাহ। বন্যার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা একটি চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া হতে পারে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: বন্যার পানি নেমে গেলে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা মেনে চলুন। বাড়ি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করে নিন, বিশেষত বৈদ্যুতিক তার, গ্যাস লিক বা অন্যান্য বিপজ্জনক অবস্থার জন্য। বাড়ি ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস ও বুট ব্যবহার করুন। ময়লা পানি বা আবর্জনার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা: গ্যাস বা বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বে সংযোগগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, সেগুলো ঠিকমত কাজ করছে ও কোন লিকেজ নেই।

বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার: বন্যার পর সব সময় বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি। বোতলজাত পানি না পেলে, পানি ফোটানো বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ফিল্টার বা স্যান্ড ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান। পুরানো বা দূষিত খাদ্য খেলে ফুড পয়জনিং হতে পারে। খাদ্য সব সময় ঢেকে রাখুন ও রান্না করার পর খাদ্য ভালভাবে গরম করে খান।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: খাদ্য খাওয়ার পূর্বে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। দূষিত পানি থেকে দূরে থাকতে হবে ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার ও শুকনো পোশাক পরিধান করতে হবে।

মশা প্রতিরোধ: বন্যার পরে মশার প্রকোপ বাড়ে। যার ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। মশারি ব্যবহার করুন ও শরীরের খোলা অংশে মশা প্রতিরোধক (মশার স্প্রে বা ক্রিম) ব্যবহার করুন। মশার বংশবিস্তার রোধ করার জন্য বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানির পাত্র বা স্থানে পানি জমতে দেবেন না।

সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বজায় রাখা জরুরি। খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করতে হবে ও সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে।

বন্যার পর রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা: নানা পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড প্রভূতি পানিবাহিত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। পেটের সমস্যা, জ্বর, মাথাব্যথা ইত্যাদি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। বন্যার পানি ত্বকের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই, চর্মরোগের যে কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আবর্জনা ও দূষিত বস্তুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: বন্যার পর আবর্জনা বা দূষিত বস্তু যেমন ভেজা কাঠ, প্লাস্টিক বা ভাঙা কাচ থেকে দূরে থাকুন। এ ধরনের বস্তুতে জীবাণু থাকতে পারে; যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হয়, তবে সুরক্ষামূলক গ্লাভস ও জুতা ব্যবহার করুন।

প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধপত্র: প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন ডায়রিয়া প্রতিরোধক ওষুধ, প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার রাখুন। জ্বর, কাশি বা সংক্রমণের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: বন্যার পরে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন ও প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

বন্যার পর সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। সঠিক পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া বন্যার পরবর্তী স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।

সিএন/আলী

Views: 0

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন