নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পর পাকিস্তানীদের দোসর আলবদর রাজাকার (পিচ কমিটি) ক্যাম্পের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে শক্তিশালী থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫শ’ ৫৪পিচ গুলি। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে সরকারীভাবে ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি নির্মানের সময় শ্রমিকরা এসব গুলি উদ্ধার করেছে।
বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বিপুল পরিমান গুলি উদ্ধারের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম, থানার ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত ১৫শ’ ৫৪পিচ গুলি থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম জানান, সরকারীভাবে ভূমিহীনদের বাড়ি নির্মাণের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারী গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া মৌজায় ৩০ শতক জায়গা ক্রয় করে সরকার। ওই জায়গায় ১৫টি পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে কাজ শুরু করে শ্রমিকরা। শুক্রবার সকালে বাড়ির কাজের জন্য লে-আউট দিতে মাটি খনন করতে গিয়ে মাত্র দেড় ফুট নীচে শ্রমিকরা ওই গুলি দেখতে পেয়ে তা উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ইউএনও আরও জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের ওইস্থানে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। ধারনা করা হচ্ছে, দেশ স্বাধীনের পর পরই রাজাকাররা এসব গুলি মাটির নীচে লুকিয়ে রাখে। যা মাটি খননের সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি নির্মাণের কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গুলি উদ্ধারের খবর পেয়ে থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মাজহারুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের উদ্ধার করা গুলির জব্দ তালিকা তৈরী করে তাদের হেফাজতে নিয়েছেন। ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, পরিত্যক্ত ও নিস্কৃয় অবস্থায় উদ্ধারকরা ১৫শ’ ৫৪পিচ গুলিগুলো শক্তিশালী থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও এলএমজি’তে ব্যবহার করা হয়। গুলিগুলো পাঁচটি করে প্রসেস অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে এগুলো অর্ধশত বছর আগে থেকে মাটির নীচে থাকায় মরিচা ধরে নিস্কৃয় হয়ে গেছে। বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দু মালিকানাধীন ওই বাড়িটি স্থানীয় পিচ কমিটির সদস্যরা দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করেছিলো। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় কিসমত সরদার পুরো বাড়িটি দখল করে নেয়। পরে কিসমত সরদারের ছেলে পলাশ তাদের দখল করা বাড়িটি বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে হাত বদল হয়ে সোহরাফ ও শাহ আলম নামের দুই ভাই এ জমির মালিকানা পায়।
বর্তমানে এর একটি অংশে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মানের লক্ষ্যে সরকার ক্রয় করেছে।মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের মানুষের ওপর নির্বিচারে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তার নিদর্শন হিসেবে এসব নিস্কৃয় গেলাবারুদ সরকারীভাবে জাদুঘরে সংরক্ষণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন গৈলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন