বাংলাদেশের আভ্যন্তরিণ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের মন্তব্যকে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করে এর কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার এক টুইটে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কিছু ইউরোপীয় ও আমেরিকান রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে চিঠি প্রকাশ করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এটা নব্য-উপনিবেশবাদ এবং সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের আরও একটি অপচেষ্টা।
বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সম্প্রতি চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ছয় সদস্য। এরপর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যও বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়ে ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলকে চিঠি দেন।
গত বছরের ডিসেম্বরেও একবার যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের ‘পক্ষে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল রাশিয়া। ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। সেদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৯ বছর আগে নিখোঁজ বিএনপি এক নেতার বাসায় যান।
ওই সফরের সময় সেখানে পিটার হাসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান জিয়াউর রহমানের আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যা ও নিখোঁজের শিকার পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’-এর সদস্যরা।
এতে পিটার হাস সেখানে তার অবস্থান সংক্ষিপ্ত করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে নিরাপত্তার শঙ্কার কথা জানান।
পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে তলব করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। জানানো হয় ঢাকায় পিটার হাসের নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা।
এ নিয়ে বাংলাদেশে নানামুখী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ঢাকার রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলে, রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের মত যে দেশগুলো বিদেশি শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি গ্রহণ করে, সে দেশগুলোর প্রতি রাশিয়া পুরোপুরি সমর্থন জানায়।
রুশ দূতাবাসের ওই বিবৃতি প্রকাশের পরদিন পাল্টা অবস্থান প্রকাশ করে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এক টুইটে দূতাবাস ইউক্রেইনে রুশ আক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে আনে। রাশিয়ার ওই বিবৃতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন শেয়ার করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের টুইট বার্তায় লেখা হয়, “ইউক্রেইনের ক্ষেত্রে কি এই নীতি মানা হয়েছে?”
রাশিয়ার এবারের বিবৃতিটি এমন এক সময়ে এল যখন নির্বাচনের পরিবেশ ও পর্যবেক্ষক পাঠানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ঢাকায় আসতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন বা অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল।
শনিবার শুরু হচ্ছে এই সফর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাধীন এ মিশন মূল নিবার্চন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করে উচ্চ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল বরাবর প্রতিবেদন দেবে।
মিশনের বিষয়ে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, “ওই প্রতিবেদন ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলের কাছে যাবে। তিনি বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেশে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি (বোরেল) বলেছেন, পর্যবেক্ষক মিশন তখনই মোতায়েন করা হবে, যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়।”
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে আছে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার পর থেকেই শুরু এই বিভক্তির।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি ও তার মিত্ররা। সেই নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ঢাকায় এসে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর তৎপরতাও ছিল দৃশ্যমান। তবে কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি।
তখনও ভারত ও রাশিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি নিয়ে ‘জনগণের ইচ্ছার’ কথা জোর দিয়ে বলেছিল।
ভোট সুষ্ঠু হবে, এমন ‘নিশ্চয়তা পেয়ে’ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যায় বিএনপি ও তার শরিকরা। কিন্তু সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে- এমন একটি অভিযোগ তুলে তারা ফের তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছে।
এবারও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সক্রিয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না তারা।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন